সংবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সংবাদ বলতে মুদ্রণজগৎ, সম্প্রচার কেন্দ্র, ইন্টারনেট অথবা তৃতীয় পক্ষের মুখপাত্র কিংবা গণমাধ্যমে উপস্থাপিত বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের একগুচ্ছ নির্বাচিত তথ্যের সমষ্টি যা যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।[১]

উৎপত্তি রহস্য[সম্পাদনা]

একটি সূত্র দাবী করছে যে, চতুর্দশ শতাব্দীতে নিউ শব্দের বহুবচন হিসেবে নিউজ বা সংবাদ শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহার করা হতো। মধ্যযুগীয় ইংরেজী হিসেবে নিউজ শব্দটির সমার্থক ছিল নিউইজ (newes), ফরাসী শব্দ নোভেলেজ (nouvelles) এবং জার্মান শব্দ নিউয়েজ (neues)।

লোকমুখে 'নিউজ' শব্দটিকে বিশ্লেষণ করা হয় - এন (নর্থ), (ঈষ্ট), ডব্লিউ (ওয়েস্ট) এবং এস (সাউথ)।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে সংবাদপত্রের সূচনা ঘটে। এর পূর্বে সংক্ষিপ্ত সরকারী ঘোষণা বা ইস্তেহার এবং রাজার আজ্ঞা প্রধান প্রধান নগরগুলোতে প্রকাশিত হতো।[৩] প্রথম লিখিতভাবে সংবাদ বা খবরের ব্যবহার মিশরে সু-সংগঠিতভাবে প্রবর্তন হয়েছিল। খ্রীষ্ট-পূর্ব ২৪০০ বছর পূর্বে ফারাও শাসন আমলে বর্তমানকালের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম কুরিয়ার সার্ভিসের আদলে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারনের উদ্দেশ্যে ডিক্রী বা আদেশনামা প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো।[৪]

প্রাচীন রোমের এক্টা ডিওরনা বা সরকারের তরফে জুলিয়াস সিজার কর্তৃক ঘোষিত ইস্তেহার জনগণের উদ্দেশ্যে তৈরী করতেন। এগুলো ধাতব পদার্থ অথবা পাথরের সাহায্যে জনগণের সম্মুখে প্রচার করা হতো।

চীনের সরকারশাসিত প্রথমদিককার সময়ে সংবাদ শীট আকৃতিতে তৈরী করা হতো। এটি টিপাও নামে পরিচিত ছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীতে হ্যান রাজবংশের শেষদিককার সময়কালে আদালতের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো। ৭১৩ থেকে ৭৩৪ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে ত্যাং রাজবংশের আমলে কাইয়ুন জা বাও (আদালতের ইস্তেহার) নামে সরকারীভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। এটি সিল্কের উপর হস্তলিখিত ছিল। সরকারী কর্মীরাই এটি প্রচারের উদ্দেশ্যে পড়ার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত ছিল। ১৫৮২ সালে মিং রাজত্বকালের শেষদিকে ব্যক্তিগতভাবে সংবাদ প্রকাশের প্রথম তথ্যসূত্র প্রয়োগের উল্লেখ করা হয়।[৫]

আধুনিক ইউরোপের শুরুর দিকে আন্তঃসীমান্ত এলাকায় পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিকল্পে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে হস্তলিখিত সংবাদের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৫৫৬ সালে ভেনিস প্রজাতন্ত্রীয় সরকার প্রথমবারের মতো মাসিক নটিজি স্ক্রিট প্রকাশ করে। এর মূল্য ছিল এক গেজেটা[৬]

সংবাদপত্র[সম্পাদনা]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহ্যগতভাবেই অধিকাংশ বৃহৎ শহরে সকাল এবং বিকালে সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো। প্রচারমাধ্যমের সম্প্রসারণ এবং সংবাদের ক্ষেত্র অসম্ভবরকমভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ বিকালের সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে কেবলমাত্র সকালেই সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।

সকালে সংবাদপত্র প্রকাশের ফলে কম ক্ষতি হয়। মূলতঃ সংবাদের গুণগত মান ও দৃষ্টিভঙ্গীই এতে সম্পৃক্ত। সাধারণতঃ সংবাদ ৫টি ডব্লিউ'র উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়। হু, হুয়াট, হোয়েন, হোয়ার, হুয়াই ছাড়াও আরও একটি ডব্লিউ (হাউ) রয়েছে। এগুলোকে ভিত্তিমূল হিসেবে ধরে যে-কোন বিষয় বা ঘটনা নিয়ে সংবাদ তৈরী করা সম্ভবপর। এশব্দগুলোর মাধ্যমে সংবাদ অনুসন্ধান কার্যক্রমের পর আর কোন প্রশ্ন বাকী থাকে না। প্রথম পৃষ্ঠায় সাধারণতঃ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ উপস্থাপন ও তথ্য পরিবেশনকে সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এরফলে ব্যস্ত পাঠকেরা স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাদের অভিষ্ট সংবাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে থাকেন।

ক্যাবল নিউজ চ্যানেল হিসেবে বিবিসি নিউজ, ফক্স নিউজ, এমএসএনবিসি, সিএনএন সংবাদের গুরুত্ব অনুসারে প্রচারের ব্যবস্থা করে।

১৬০৫ সালে প্রকাশিত রিলেশন অলার ফুর্নেমেন আন্ড গেডেনঙ্কুরডিগেন হিস্টোরিয়েনকে বিশ্বের ১ম সংবাদপত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।[৭]

সংবাদ সংস্থা[সম্পাদনা]

পৃথিবীর প্রাচীনতম সংবাদ সংস্থা হিসেবে এজেন্সী ফ্রান্স-প্রেস বা এএফপি'র নাম সর্বজনস্বীকৃত।[৮] এটি ১৮৩৫ সালে ফরাসী অনুবাদক এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থার এজেন্ট চার্লস-লুইস হাভাস কর্তৃক এজেন্সী হাভাস নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।

মাধ্যম[সম্পাদনা]

বর্তমানে সংবাদপত্রে মুদ্রণের জন্য নিউজরুম বা বার্তাকক্ষে ফোন ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি একজন প্রতিবেদক টাইপ করে তার প্রতিবেদন নিউজরুম বা বার্তাকক্ষে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। সাধারণত তারের মাধ্যমে কিংবা হস্তলিখিত সংবাদ নির্দিষ্ট সংস্করণে প্রকাশের জন্য কিংবা অন্যান্য সংবাদের সাথে প্রকাশের জন্য পাঠানো হয়।

সর্বশেষ সংবাদ[সম্পাদনা]

আজকাল সর্বশেষ সংবাদ বা ব্রেকিং নিউজ নামে সংবাদের নতুন একটি অংশবিশেষ কিংবা পরিভাষার জন্ম হয়েছে। এটি বাণিজ্যিকভাবে প্রচারণার জন্য ইউনাইটেড স্টেটস্‌ ক্যাবল নিউজ সার্ভিসে দিন-রাত ২৪ ঘন্টায় প্রকাশিত হয়। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সাহায্যে এ সেবায় বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়। এছাড়াও বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা বিবিসি সর্বশেষ সংবাদ ই-মেইলের সাহায্যে গ্রাহককে প্রেরণ করে থাকে।

পৃথিবীর বিভিন্ন শহর বা দেশে যে ঘটনাগুলো প্রতিটি মুহূর্তে ঘটছে তা প্রাপ্তিসাপেক্ষে দ্রুত প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। এতে রেডিও বা বেতার, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Shirkey, Clay (২০০৮)। Here Comes Everybody। Penguin। পৃ: ৬৪ |pages= অথবা |at= অতিরিক্ত (সাহায্য)আইএসবিএন 9781594201530 
  2. [১] World Wide Words
  3. http://mashable.com/follow/topics/news/
  4. http://www.ucsams.nl/
  5. Brook, Timothy. (1998). The Confusions of Pleasure: Commerce and Culture in Ming China. Berkeley: University of California Press. ISBN 0-520-22154-0 (Paperback). Page xxi.
  6. Wan-Press.org, A Newspaper Timeline, World Association of Newspapers
  7. Weber 2006, পৃ. 396; World Association of Newspapers: "Newspapers: 400 Years Young!"
  8. Broderick, James F.; Darren W. Miller (২০০৭)। Consider the source: A Critical Guide to 100 Prominent News and Information Sites on the Web। Information Today, Inc.। পৃ: 1। আইএসবিএন 0-9109-6577-3  |coauthors= প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]