বাহরাইন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাহরাইনের রাজ্য
مملكة البحرين
Mamlakat al-Bahrayn
পতাকা Emblem
জাতীয় সঙ্গীত
بحريننا
Bahrainona
(আমাদের বাহরাইন)
রাজধানী মানামা
২৬°১৩′ উত্তর ৫০°৩৫′ পূর্ব / ২৬.২১৭° উত্তর ৫০.৫৮৩° পূর্ব / 26.217; 50.583
রাষ্ট্রীয় ভাষাসমূহ আরবি
সরকার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
 -  রাজা হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা
 -  রানী সাবিকা বিন্ত ইব্রাহিম
 -  প্রধানমন্ত্রী কালিফাহ্‌ ইবন সুলমান আল কালিফাহ্‌
স্বাধীন যুক্তরাজ্য থেকে 
 -  তারিখ ১৫ই আগষ্ট ১৯৭১ 
আয়তন
 -  মোট ৭৫০ বর্গকিমি (১৮৯তম)
২৯০ বর্গমাইল 
 -  জলভাগ (%)
জনসংখ্যা
 -  ২০০৯ আনুমানিক ৭৯১,০০০[১] 
 -  ঘনত্ব ১,১৮৯.৫ /বর্গ কিমি (৭তম)
৩,১২৬.৫ /বর্গমাইল
জিডিপি (পিপিপি) ২০০৮ আনুমানিক
 -  মোট $২৭.০১৪ বিলিয়ন[২] (১১৮তম)
 -  মাথাপিছু $৩৪,৬৬২[২] (৩২তম)
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৭) বৃদ্ধি ০.৮৯৫[৩] (উচ্চ) (৩৯তম)
মুদ্রা বাহারাইনী দিনার (BHD)
সময় স্থান (ইউটিসি+৩)
ইন্টারনেট টিএলডি .bh
কলিং কোড ৯৭৩
১. Includes 235,108 non-nationals (July 2005 estimate).

বাহরাইন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। বাহরাইন পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশের ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর পূর্বে সৌদী আরব ও পশ্চিমে কাতার। সবচেয়ে বড় দ্বীপটিও বাহরাইন নামে পরিচিত এবং এতে দেশটির বৃহত্তম শহররাজধানী মানামা অবস্থিত।

প্রায় ৫,০০০ বছর আগেও বাহরাইন একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সবসময়ই এটি শক্তিশালী প্রতিবেশীদের অধীনস্থ ছিল। ১৭শ শতকে এটি ইরানের দখলে আসে। ১৭৮৩ সালে মধ্য সৌদী আরবের আল-খলিফা পরিবার নিজেদেরকে বাহরাইনের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং তখন থেকে তারাই দেশটিকে শাসন করে আসছে। ১৯শ শতকের কিছু সন্ধিচুক্তির ফলে যুক্তরাজ্য দেশটির প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বাহরাইন ব্রিটিশ প্রভাবাধীন ছিল।

বাহরাইনের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি সেখানেই জন্ম-নেওয়া। এছাড়া বাহরাইনে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা সুন্নী মুসলিমদের প্রায় দ্বিগুণ। তবে সুন্নীরা বাহরাইনের সরকার নিয়ন্ত্রণ করেন।

১৯৩০-এর দশকে বাহরাইন পারস্য উপসাগরের প্রথম দেশ হিসেবে তেল-ভিত্তিক অর্থনীতি গঠন করে, কিন্তু ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকেই এর সমস্ত তেল ফুরিয়ে যায়। তবে দেশটি এই পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ করে রেখেছিল এবং দেশটির অর্থনীতি এখনও উন্নতি করে যাচ্ছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বর্তমান বাহরাইন অঞ্চলে ব্রোঞ্জ যুগে দিলমুন নামক সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। ৫ হাজার বছর আগেও বাহরাইন সিন্ধু অববাহিকা ও মেসোপটেমিয়ার সভ্যতাগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ অব্দের দিকে ভারত থেকে বাণিজ্য আসা বন্ধ হয়ে গেলে দিলমুন সভ্যতার পতন ঘটা শুরু করে। ৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে আসিরীয় রাজার বাহরাইনকে ক্রমাগত নিজেদের বলে দাবী করতে শুরু করে। ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু পরে দিলমুন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। এরপর অনেক দিন যাবৎ বাহরাইনের কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে পারস্য উপসাগরে মহাবীর আলেকজান্ডারের পদার্পণ ঘটলে আবার এর হদিস পাওয়া যায়। যদিও আরব গোত্র বনি ওয়াএল এবং পারসিক গভর্নরেরা অঞ্চলটি শাসন করতেন, খ্রিস্টীয় ৭ম শতক পর্যন্তও এটি গ্রিক নাম তিলোস (Tylos) নামে পরিচিত ছিল। ঐ শতকে এখানকার অধিবাসীরা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। বাহরাইন ছিল আঞ্চলিক বাণিজ্য ও মুক্তা আহরণ কেন্দ্র। ৭ম শতক থেকে বিভিন্ন পর্বে এলাকাটি সিরিয়ার উমাইয়া বংশীয় খলিফাগণ, বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাগণ, পারসিক, ওমানি এবং পর্তুগিজদের দ্বারা শাসিত হয়। শেষ পর্যন্ত বনি উতবাহ গোত্রের আল খালিফা পরিবার ১৭৮৩ সালে ইরানীদের কাছ থেকে অঞ্চলটি দখল করে এবং তখন থেকে আজ পর্যন্ত তারা বাহরাইনের শাসক।

১৮৩০-এর দশকে আল খালিফা পরিবার একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাহরাইনকে একটি ব্রিটিশ প্রটেক্টোরেটে পরিণত করে, অর্থাৎ যুক্তরাজ্য বহিরাক্রমণ থেকে দেশটির সুরক্ষার দায়িত্ব নেয় এবং এর বিনিময়ে বাহরাইন যুক্তরাজ্যের অনুমতি ছাড়া অন্য কোন বিদেশী শক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হারায়। বাহরাইনে বড় আকারে খনিজ তেলের উৎপাদন শুরু হবার কিছু পরেই ১৯৩৫ সালে পারস্য উপসাগর অঞ্চলে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটিটি বাহরাইনে নিয়ে আসা হয়।

১৯৬৮ সালে যুক্তরাজ্য সরকার পারস্য উপসাগরের শেখশাসিত রাজ্যগুলির সাথে ইতোমধ্যে করা চুক্তিগুলি রদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় বাহরাইন কাতার এবং বর্তমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭টি শেখরাজ্যের সাথে মিলে একটি বৃহৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সাল নাগাদ এই নয় রাজ্য সংযুক্তিকরণের বিভিন্ন ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। ফলে ১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট বাহরাইন একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

নতুন রাষ্ট্র বাহরাইনের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা হয় এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচিত হয়, কিন্তু মাত্র দুই বছর পরে ১৯৭৫ সালে বাহরাইনের আমির সংসদ ভেঙে দেন, কেননা নির্বাচিত সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আল-খলিফা শাসনের অবসান এবং মার্কিন নৌবাহিনীকে সেখান থেকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা করছিল।

১৯৯০-এর দশকে বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের অসন্তুষ্টি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘাতের আকারে প্রকাশ পায়। এর প্রেক্ষিতে বাহরাইনের আমির প্রায় ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত, ১৯৯৫ সালে, বাহরাইনের মন্ত্রীসভায় পরিবর্তন আনেন, এবং আইন পর্যালোচনাকারী কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৪০-এ বৃদ্ধি করেন। এর ফলে সংঘাতের পরিমাণ প্রথমে কিছু কমলেও ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ-তে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে এবং এতে অনেকে নিহত হয়। পুলিশ প্রায় ১ হাজার লোককে এর জের ধরে গ্রেফতার করে এবং কোন বিচার ছাড়াই এদের শাস্তি দেয়া হয়। সম্প্রতি বাহরাইন সরকার এদের অনেককে ছেড়ে দিয়েছে।

বাহরাইন ১৯৭১ সালে স্বধীনতা লাভ করে। বাহার শব্দের অর্থ সাগর আর বাহরাইন হচ্ছে দু'টি সাগর। এটি একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এর চারদিকে সাগর I

রাজনীতি[সম্পাদনা]

বাহরাইনের রাজনীতি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামোতে সংঘটিত হয়। রাজা শাইখ হামাদ বিন ইসা আল খালিফা সরকার চালানোর জন্য একজন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। বাহরাইনের আইনসভা দুই-কক্ষবিশিষ্ট। নিম্ন কক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেন। ঊর্ধ্বকক্ষ তথা শুরা কাউন্সিলের সদস্যদের রাজা নিয়োগ দেন। বর্তমানে খালিফা ইবন সুলমান আল-খালিফা দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজপুত্র শাইখ সালমান বাহরাইনের সেনাবাহিনীর কমান্ডার।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ[সম্পাদনা]

ভূগোল[সম্পাদনা]

বাহরাইন রাষ্ট্রটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে ২৪ কিমি দূরে পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ৩২টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম বাহরাইন দ্বীপ। দ্বীপটির বেশির ভাগ অংশ মরুময় ঊষর নিম্নভূমি। কেবল উত্তরের উপকূলে এক চিলতে সমভূমি আছে যেখানে রাজধানী মানামা অবস্থিত।

== অর্থনীতি ==বর্তমানে অর্থনীতিক উনত

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

আরবি ভাষা বাহরাইনের সরকারী ভাষা। এছাড়াও এখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিতে ফার্সি ভাষা, উর্দু ভাষা, এবং হিন্দি ভাষা বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত। আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য এবং পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাহরাইনে সাত লক্ষের কিছু বেশি লোকের বাস। এদের ৯৯% মুসলমান। বাকী ১% মূলত ইহুদী ও খ্রিস্ট ধর্মাবলবম্বী। মুসলমানদের মধ্যে প্রায় ৭০% শিয়া মতাবলম্বী। বাকীরা সুন্নী। অমুসলিম বিদেশীদের মধ্যে খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন মতাবলম্বী ছাড়াও হিন্দু, বাহাই, বৌদ্ধ, শিখ, ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী আছে।

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

সঙ্গীত[সম্পাদনা]

বাহরাইনের সঙ্গীত অনেকটা এর প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহের মতই। খালিজি (Khaliji) , এক প্রকার ফোক সঙ্গীত সমগ্র বাহরাইন জুড়ে জনপ্রিয়। এছাড়া শহুরে ঘরানার সাওত (sawt) সঙ্গীতও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আলি বাহার বাহরাইনের বিখ্যাত গায়কদের একজন। Al Ekhwa (আরবি অনুবাদ- দ্যা ব্রাদার্স) তাঁর সঙ্গীত দলের নাম। এছাড়াও পারসিয়ান গালফ স্টেটস সমূহের মধ্যে বাহরাইনেই সর্বপ্রথম recording studio স্থাপন করা হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Department of Economic and Social Affairs Population Division (2009). "World Population Prospects, Table A.1" (.PDF). 2008 revision. United Nations. Retrieved on 2009-03-12.
  2. ২.০ ২.১ "Bahrain"। International Monetary Fund। সংগৃহীত ২০০৯-১০-০১ 
  3. "Human Development Report 2009: Bahrain"। The United Nations। সংগৃহীত ২০০৯-১০-১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]