ব্রাজিল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Brazil থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল
পতাকা সীলমোহর
নীতিবাক্য
  • "Ordem e Progresso" (পর্তুগিজ)
  • "শৃঙ্খলা এবং উন্নতি"
জাতীয় সঙ্গীত

জাতীয় সীল
রাজধানী Brasão do Distrito Federal (Brasil).svg ব্রাসিলিয়া
১৫°৪৭′ দক্ষিণ ৪৭°৫২′ পশ্চিম / ১৫.৭৮৩° দক্ষিণ ৪৭.৮৬৭° পশ্চিম / -15.783; -47.867
বৃহত্তম শহর Brasão da cidade de São Paulo.svg সাও পাওলো
রাষ্ট্রীয় ভাষাসমূহ পর্তুগিজ[১]
জাতিগত গোষ্ঠী (২০১০[২])
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ ব্রাজিলীয়
সরকার ফেডারেল রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র
 -  রাষ্ট্রপতি দিলমা রৌসেফ (পিটি)
 -  উপ-রাষ্ট্রপতি Michel Temer (পিএমডিবি)
 -  ডেপুটি চেম্বারের সভাপতি Henrique Eduardo Alves (পিএমডিবি)
 -  সেনেটের সভাপতি Renan Calheiros (পিএমডিবি)
 -  সুপ্রিম ফেডারেল কোর্টের সভাপতি Ricardo Lewandowski
আইন-সভা জাতীয় কংগ্রেস
 -  উচ্চকক্ষ ফেডারেল সেনেট
 -  নিম্নকক্ষ ডেপুটি চেম্বার
স্বাধীনতা কিংডম অফ পর্তুগালের কাছ থেকে (বর্তমানে পর্তুগাল
 -  ঘোষণা ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৮২২ 
 -  স্বীকৃতি লাভ ২৯শে আগস্ট, ১৮২৫ 
 -  প্রজাতন্ত্র ১৫ই নভেম্বর, ১৮৮৯ 
 -  বর্তমান সংবিধান ৫ই অক্টোবর, ১৯৮৮ 
আয়তন
 -  মোট ৮৫,১৫,৭৬৭ বর্গ কিমি. (৫ম)
৩২,৮৭,৫৯৭ বর্গ মাইল 
 -  জলভাগ (%) 0.65
জনসংখ্যা
 -  ২০১৪ আনুমানিক 202,656,788[৩] (৫ম)
 -  ঘনত্ব 23.7/বর্গ কিলোমিটার 
৬১.৫/বর্গ মাইল
জিডিপি (পিপিপি) ২০১৪ আনুমানিক
 -  মোট $২.৫০৫ ট্রিলিয়ন[৪] (৭ম)
 -  মাথাপিছু $১২,৫২৬[৪] (৭৯তম)
জিডিপি (নামমাত্র) ২০১৪ আনুমানিক
 -  মোট $২.২১৫ ট্রিলিয়ন[৪] (৭ম)
 -  মাথাপিছু $১১,০৮০[৪] (৬৩তম)
জিনি (২০১২) 51.9 
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৩) ০.৭৪৪ (৭৯তম)
মুদ্রা Real (R$) (BRL)
সময় স্থান BRT (ইউটিসি−২ থেকে −৫)
 -  গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) BRST (ইউটিসি−২ থেকে −৫)
তারিখ বিন্যাস dd/mm/yyyy (CE)
ট্রাফিকের দিক right
ইন্টারনেট টিএলডি .br
কলিং কোড +৫৫
ক. Multiracial.

সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল[৫][৬] (পর্তুগিজ: República Federativa do Brasil, পর্তুগিজ উচ্চারণ: [he'publikɐ fedeɾa'tʃivɐ du bɾa'ziw] বা হেপুব্লিকা ফ়েদেরাচিভ়া দু ব্রাজ়িউ এই শব্দ সম্পর্কে শুনুন ), যা প্রচলিতভাবে ব্রাজিল (পর্তুগিজ: Brasil, পর্তুগিজ উচ্চারণ: [bɾaˈziw] বা ব্রাজিউ) নামে পরিচিত, হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। এছাড়াও জনসংখ্যাভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ৮,৫১৪,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার (৫,২৯০,৮৯৯ বর্গমাইল) আয়তনের এই দেশটিতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি।[৭][৮] এটি আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ, এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র।[৭]

ব্রাজিলে পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। যার উপকূলীয়ভাগের দৈর্ঘ প্রায় ৭,৪৯১ কিমি (৪,৬৫৫ মা)।[৭] ব্রাজিলের উত্তরে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম, ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা। এছাড়াও এর উত্তর-পশ্চিমভাগে কলম্বিয়া; পশ্চিমে বলিভিয়াপেরু; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনাপ্যারাগুয়ে, এবং সর্ব-দক্ষিণে দক্ষিণে উরুগুয়ে অবস্থিত। ব্রাজিলীয় সীমানায় আটলান্টিক মহাসাগরের বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ[৭] ব্রাজিলের সাথে চিলিইকুয়েডর ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশেরই সীমান্ত-সংযোগ রয়েছে।

১৫০০ সালে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউয়ের ব্রাজিলে এসে পৌঁছানোর পর থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রাজিল ছিলো একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৮১৫ সালে এটি যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, ও আলগ্রেভিজের সাথে একত্রিত হয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা গঠন করে। মূলত ১৮০৮ সালেই ব্রাজিলের ‘পর্তুগিজ উপনিবেশ’ পরিচয়ে ফাটল ধরে, কারণ নেপোলিয়নের পর্তুগাল আক্রমণের রেশ ধরে পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র লিসবন থেকে ব্রাজিলের রিও দি জানেইরুতে সরিয়ে নওয়া হয়।[৯] ১৮২২ সালে ব্রাজিল, পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাথমিক ভাগে এটি ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্য হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করলেও ১৮৮৯ সাল থেকে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। ১৮২৪ সালে ব্রাজিলের প্রথম সংবিধান পাশ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে, যা বর্তমানে কংগ্রেস নামে পরিচিত।[৯] বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ব্রাজিল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র[১০] একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট, ২৬টি প্রদেশ, ও ৫,৫৬৪টি মিউনিসিপ্যালিটি নিয়ে এর যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছে।[১০][১১]

ক্রয়ক্ষমতা সমতা[১২]মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের[১৩] ভিত্তিতে ব্রাজিলের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। এর অর্থনৈতিক সংস্কার আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশটিকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে।[১৪] ব্রাজিল জাতিসংঘ, জি-২০, সিপিএলপি, লাতিন ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন অফ ইবেরো-আমেরিকান স্টেটস, মার্কুসাউইউনিয়ন অফ সাউথ আমেরিকান নেশন্স, এবং ব্রিক দেশগুলোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্রাজিল জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। ব্রাজিলে বিভিন্ন প্রকারের প্রকৃতি সংরক্ষণকেন্দ্র ও অভয়ারণ্য বিদ্যমান। এছাড়াও দেশটি সমৃদ্ধ খনিজসম্পদের অধিকারী, যা বিভিন্ন সময়ে এর অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।[৭]

ব্রাজিলে বিভিন্ন জাতের লোকের বাস। আদিবাসী আমেরিকান, পর্তুগিজ বসতিস্থাপক এবং আফ্রিকান দাসদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্রাজিলের জাতিসত্তাকে দিয়েছে বহুমুখী রূপ। ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৬শ শতকে পর্তুগিজদের আগমনের আগে বহু আদিবাসী আমেরিকান দেশটির সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ১৬শ শতকের মধ্যভাগে পর্তুগিজেরা কৃষিকাজের জন্য আফ্রিকা থেকে দাস নিয়ে আসা শুরু করে।[১৫][১৬] এই তিন জাতির লোকেদের মিশ্রণ ব্রাজিলের সংস্কৃতি, বিশেষ করে এর স্থাপত্য ও সঙ্গীতে এমন এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য এনেছে কেবল ব্রাজিলেই যার দেখা মেলে। ১৯শ শতকের শেষ দিকে ও ২০শ শতকের গোড়ার দিকে ব্রাজিলে আগমনকারী অন্যান্য ইতালীয়, জার্মান, স্পেনীয়, আরব, ও জাপানি অভিবাসীরাও ব্রাজিলের সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে।[১৭] মিশ্র সংস্কৃতির দেশ হলেও কিছু কিছু আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ব্রাজিলীয়, ইউরোপ ও এশিয়া থেকে আগত অ-পর্তুগিজ অভিবাসী, এবং আদিবাসী আমেরিকানদের অংশবিশেষ এখনও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি ধরে রেখেছে। তবে পর্তুগিজ সংস্কৃতির প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। পর্তুগিজ এখানকার প্রধান ভাষা এবং রোমান ক্যাথলিক প্রধান ধর্ম।[১৮]

বুৎপত্তি[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: ব্রাজিলের নাম

ব্রাজিল নামটির বুৎপত্তি পরিষ্কার নয়। ঐতিহ্যগতভাবে ধারণা করা হয় ‘ব্রাজিল’ নামটি এসেছে ব্রাজিলউড থেকে, যা এক প্রকার কাঠ উৎপাদনকারী গাছ। ১৬ শতকের দিকে ব্রাজিল থেকে নাবিকরা ইউরোপে এই কাঠ রপ্তানি করতো।[১৯] পর্তুগিজ ভাষায় ব্রাজিলউডকে ‘পাউ-ব্রাজিউ’ (pau-brasil) নামে ডাকা হয়, আর ‘ব্রাজিউ’ শব্দটির বুৎপত্তি হয়েছে ‘জলন্ত কয়লার মতো লাল’ শব্দগুচ্ছ থাকে। লাতিন ভাষায় ‘ব্রাজা’ (brasa) শব্দের অর্থ কয়লা এবং শেষের ‘-il’ উপসর্গটি লাতিন ‘-iculum’ বা ‘-ilium’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।[২০][২১][২২] পরবর্তীতে পর্তুগিজ ‘ব্রাজিউ’ শব্দটি থেকে ইংরেজিতে ব্রাজিল নামটি এসেছে। বুৎপত্তির এই তত্ত্বটি ব্রাজিল ও পর্তুগালের স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে পড়ানো হয়।

ব্রাজিলীয় পণ্ডিত জুসে আদেলিনু দা সিলভা আজেভেদুর স্বীকার্য অনুসারে ‘ব্রাজিল’ শব্দটির বুৎপত্তিস্থল আরও অনেক পুরোনো এবং এর উৎপত্তি হয়েছে মূলত কেল্টিক বা ফিনিসিয়ীয় থেকে। ফিনিসিয়ীরা কেল্টিক দ্বীপগুলোর খনি থেক প্রাপ্ত এক প্রকার খনিজ দ্রব্য থেকে উৎপন্ন লাল রঞ্জন ইবেরিয়া থেকে আয়ারল্যান্ডে রপ্তানি করতো।[২৩] আয়ারল্যান্ডীয় পুরাণে হাই-ব্রাজিল নামে পশ্চিমে অবস্থিত একটি দ্বীপের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। টলকিনসহ কারও কারও মতে এই দ্বীপটির নাম থেকেই ‘ব্রাজিল’ শব্দটির উৎপত্তি।[২৪] ষোড়শ শতকে বিভিন্ন পণ্ডিতগণও এই তত্ত্বটিকে সমর্থন করেছেন।[১৯]

দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী ভাষা গুয়ারানিতে ব্রাজিলকে ‘পিন্দুরামা’ নামে ডাকা হয়। অতীতে ব্রাজিল অঞ্চলটি আদিবাসীদের কাছে এই নামেই পরিচিত হতো। পিন্দুরামা শব্দের অর্থ ‘তাল গাছের ভূমি’।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পর্তুগিজ উপনিবেশ[সম্পাদনা]

আরও দেখুন: ব্রাজিলের আদিবাসী এবং ব্রাজিলে দাসপ্রথা

১৫০০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউ পরিচালিত একটি পর্তুগিজ নৌবহর বর্তমানের ব্রাজিলে এসে পৌঁছায় এবং পর্তুগালের রাজা প্রথম মানুয়েলের নামে ভূখণ্ডটিতে পর্তুগালের অধিকার দাবি করে।[২৫] সে সময় পর্তুগিজরা ব্রাজিলে বসবাসরত প্রস্তর যুগের আদিবাসীদের সাথে পরিচিত হয়। এসকল আদিবাসীদের বেশিরভাগ-ই কথা বলতো তুপি-গুয়ারানি পরিবারের বিভিন্ন ভাষায়, এবং আদিবাসী গোত্রগুলো পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিল।[২৬]

১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলে প্রথম পর্তুগিজ উপনিবেশটি গোড়াপত্তন হয়। তবে ১৫৩৪ সালে ডম তৃতীয় জোয়াউঁ কর্তৃক সমগ্র অঞ্চলটি ১২টি পৃথক বংশানুক্রমিক নেতৃত্বে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।[২৭][২৮] কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রথাটি সমস্যাপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের রাজা পুরো উপনিবেশ প্রশাসনের জন্য একজন গভর্নর-জেনারেল নিয়োগ দেন।[২৮][২৯] পর্তুগিজরা কিছু আদিবাসী গোত্রকে নিজেদের দলে নেয়।[৩০] অপরদিকে বাকিদেরকে তঁরা দাস হিসেবে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে। এছাড়াও কিছু কিছু গোত্রকে দীর্ঘ যুদ্ধে হারিয়ে ও রোগ বিস্তারের মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়। ইউরোপীয় রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় সেসকল আদিবাসীদের জানা ছিল না, তাই খুব সহজেই তাঁরা রোগাক্রান্ত হয়।[৩১][৩২] ১৬শ শতকের মধ্যভাগে ঔপনিবেশিকেরা উত্তর-পূর্ব উপকূলের ভালো মাটি ও ক্রান্তীয় জলবায়ুর সুযোগ নিয়ে সেখানে চিনির প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে। সে সময় চিনি ছিল ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য।[২৬][৩৩] আন্তজার্তিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার[৩১][৩৪] সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্তুগিজরা আফ্রিকান দাসদেরও ব্রাজিলে নিয়ে আসা শুরু করে।[১৫][১৬]

ব্রাজিলীয় চিত্রশিল্পী ভিক্তর মিরিইলেসের অঙ্কিত ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ব্রাজিলের প্রথম খ্রিষ্ঠীয় গণ-নৈশভোজের চিত্র

ফরাসিদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে পর্তুগিজরা তাঁদের দখলকৃত ভূখণ্ড ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত করতে থাকে। ১৯৫৭ সালে তাঁরা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত রিউ দি জানেইরু ও ১৬১৫ সালে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাউঁ লুইসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।[৩৫] ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে তাঁরা আমাজন অরণ্য অভিমূখে অভিযান শুরু করে ও ঐ অঞ্চলে অবস্থিত ব্রিটিশ ও ওলন্দাজ উপনিবেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।[৩৬] নিয়ন্ত্রণ লাভের পর পর্তুগিজরা অঞ্চলগুলোতে নিজেদের গ্রাম ও দূর্গ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকে আরও সুসংহত করে।[৩৭] ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের এ অভিযান সর্ব দক্ষিণে বিস্তৃত হয়। সেখানে রিও দে লা প্লাতা নদীর তীরে তাঁরা সাক্রামেন্তো শহরের গোড়াপত্তন করে, বর্তমানে যা উরুগুয়ের অংশ।[৩৮]

১৭ শতকের শেষভাগে ব্রাজিলের চিনি রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে,[৩৯] তবে ১৬৯০-এর দশকে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে বেশ কিছু স্বর্ণখনি আবিষ্কৃত হয়। পর্তুগিজ ভাষায় বান্দিরাঞ্চিস (Bandeirantes) নামে পরিচিত এই পর্তুগিজ স্কাউটরা বর্তমান ব্রাজিলের মাতু গ্রসোগোইয়াস অঞ্চলে স্বর্ণখনির সন্ধান পান। তৎকালীন সময়ে জায়গাটির নামকরণ করা হয় মিনাজ জেরাইস (বাংলা অর্থ ‘সাধারণ খনি’), যা বর্তমানে ব্রাজিলের একটি প্রদেশ। স্বর্ণখনি আবিস্কারের ফলে চিনি রপ্তানি কমে যাওয়া থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে পর্তুগিজ উপনিবেশ রক্ষা পায়।[৪০] এছাড়াও স্বর্ণখনিতে কাজের উদ্দেশ্যে সমগ্র ব্রাজিলসহ পর্তুগাল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী এ অঞ্চলে পাড়ি জমায়।[৪১] এই সময় দেশের অভ্যন্তরভাগে বসতি স্থাপিত হয় এবং অর্থনীতি ও জনসংখ্যার প্রধান কেন্দ্র দেশের উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে স্থানান্তরিত হয়।

স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকগণ এ অঞ্চলে পর্তুগিজ উপনিবেশের সম্প্রসারণে বাঁধা প্রদান করে আসছিল। ১৪৯৪ সালে স্পেন অধিকৃত ভূখণ্ডে পর্তুগিজদের উপনিবেশ সম্প্রসারণ রোধে উভয়পক্ষের মধ্যে তোর্দিজিলাস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৭ সালে স্পেনীয়রা পর্তুগিজ অধিকৃত বান্দা ওরিয়েন্টাল নিজেদের দখলে আনতে সমর্থ হয়। যদিও পরবর্তীকালে এ বিজয় নিষ্ফল বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ ঐ বছরেই পর্তুগিজ ও স্পেনীয় সাম্রাজ্যের ভেতর প্রথম সান লিদিফোনসো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুসারে এ অঞ্চলের পর্তুগিজদের সম্প্রসারিত সকল অঞ্চলে পর্তুগালের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়। বর্তমান ব্রাজিলের সীমানাও মূলত এই সম্প্রসারিত ভূখণ্ডের সীমানার প্রতি লক্ষ্য রেখেই নির্ধারিত হয়েছে।[৪২]

১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ রাজ পরিবার, পর্তুগালে অনুপ্রবেশকৃত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীকে তাড়ানোর চেষ্টা করছিল। সে সময় নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী পর্তুগালসহ মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ স্থানেই নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিল। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে রাজ পরিবার নিজেদেরকে ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরুতে সরিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে এটি সম্পূর্ণ পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।[৪৩] ১৮১৫ সালে ডম ষষ্ঠ জোয়াউঁ, তাঁর অকর্মক্ষম মায়ের পক্ষে রিজেন্ট হিসেবে ব্রাজিলকে পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে উন্নীত করে পর্তুগালের সাথে একত্রিত একটি সার্বভৌম যুক্তরাজ্যীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম হয় ইউনাইটেড কিংডম অফ পর্তুগাল, ব্রাজিল, অ্যান্ড দি আলগ্রাভিস[৪৩] ১৮০৯ সালে পর্তুগিজরা ফরাসি গায়ানা দখল করে (যদিও পরবর্তীতে ১৮১৭ সালে তা ফ্রান্সের কাছে ফিরিয়ে দেয়)।[৪৪] এছাড়ারও ১৮১৬ সালে ইস্টার্ন স্ট্রিপও তাঁরা নিজেদের দখলে নেয়, ও কিসপ্লাতিনা নামে নামকরণ করে।[৪৫] কিন্তু ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিল এ অঞ্চলটির ওপর তার নিয়ন্ত্রণ হারায়, এবং অঞ্চলটিতে উরুগুয়ে নামের একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়।[৪৬]

স্বাধীনতা ও সাম্র্যাজ্য[সম্পাদনা]

১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম পেদ্রু কর্তৃক ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা

১৮২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজা ষষ্ঠ জোয়াউঁ ইউরোপে ফিরে যান, ও যাবার পূর্বে তাঁর বড় ছেলে পেদ্রু জি কান্তারাকে ব্রাজিলের রিজেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেন।[৪৭] পরবর্তীতে পর্তুগিজ সরকার ব্রাজিলকে পুনরায় পর্তুগিজ উপনিবেশে পরিণত করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ১৮০৮ সাল থেকে চলে আসা অঞ্চলটির নিজেদের অর্জন থেকে বঞ্চিত[৪৮] ব্রাজিলীয়রা পুরনায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করে। রিজেন্ট পেদ্রু পর্তুগালে ফিরতে অস্বীকৃত জানান ও ব্রাজিলীয়দের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন। ১৮২২ সালের ৭ নভেম্বর পেদ্রু আনুষ্ঠানিকভাবে পর্তুগালের কাছে থেকে ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।[৪৯] একই বছরের ১২ অক্টোবর ডম পেদ্রু ব্রাজিলের প্রথম সম্রাট হিসাবে স্থলাভিষিক্ত হন, এবং ১৮২২ সালের ১ ডিসেম্বর সিংহাসনে আরোহণ করেন।[৫০] এর মাধ্যমেই ব্রাজিলে ৩২২ বছর ধরে চলে আসা পর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটে।

তৎকালীন সময়ে ব্রাজিলীয়রা রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন, এবং গণতন্ত্র ততোটা জনপ্রিয় ছিল না।[৫১][৫২] স্বাধীনতার ঘোষণার ফলস্বরূপ ব্রাজিলের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, যা ব্রাজিলের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, ও দক্ষিণাঞ্চলসহ পর্তুগিজ অধিকৃত প্রায় সম্পূর্ণ অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছিল।[৫৩] অবেশেষে ১৮২৪ সালের ৮ মার্চ পর্তুগিজ সৈন্যরা ব্রাজিলীয়দের কাছে আত্মসমর্পন করে,[৫৪] এবং ১৮২৫ সালের ২৯ আগস্ট পর্তুগাল ব্রাজিলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।[৫৫]

১৮২৪ সালের ১৫ মার্চ ব্রাজিলের প্রথম সংবিধানটি জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করার পূর্বে এটি মিউনিসিপ্যালিটি কাউন্সিলগুলোর অনুমোদন লাভ করে।[৫৬][৫৭][৫৮][৫৯] ১৮৩১ সালের ১ এপ্রিল প্রথম পেদ্রু সিংহাসন ছেড়ে দেন ও তাঁর কন্যার রাজত্ব পুনরায় দাবি করার উদ্দেশ্যে পর্তুগালে পাড়ি জমান। যাবার পূর্বে তিনি তাঁর পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে নির্বাচিত করে যান, যিনি পরবর্তীতে ডম দ্বিতীয় পেদ্রু নামে সিংহাসনে আরোহন করেন।[৬০] যেহেতু নতুন সম্রাটের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল, তাই এ সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্যে রিজেন্সি পদ্ধতি চালু করা হয় ও সম্রাটের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রিজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়।[৬১]

রিজেন্সি চালুর পর ব্রাজিলের বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্রোহে রূপ নেয়। এটি রিজেন্সি ব্যবস্থাটিকে বেশ অস্থিতিশীল করে তোলে ও রিজেন্টদের শাসনে ব্রাজিল প্রায় অরাজক একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।[৬২] বিদ্রোহের ফলস্বরূপ কিছু কিছু প্রদেশ ব্রাজিল থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র গঠন করে, যদিও এসকল গোষ্ঠীর বিদ্রোহটি সত্যিকার অর্থে রাজতন্ত্রের বিপক্ষে ছিল না।[৬৩][৬৪] তবে এসব কিছুই বলবৎ ছিল যতোদিন দ্বিতীয় পেদ্রু নিজে রাষ্ট্রভার গ্রহণে অসমর্থ ছিলেন।[৬৫] এমতাবস্থায় রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পেদ্রুর আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের বয়স কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়, এবং তিনি শাসনভার গ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহনের পর তিনি এক টানা ৫৮ বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকার পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নও সাধিত হয়।[৬৬]

ওয়ার অফ দ্য ট্রিপল অ্যালায়েন্সের যুদ্ধে ব্রাজিলীয় বাহিনীর (নীল পোষাক পরিহিত) সাথে প্যারাগুয়েইয়ান সেনাবাহিনীর (কিছু লাল শার্ট পরিহিত ও বাকীরা খালি গায়ে) যুদ্ধ

দ্বিতীয় পেদ্রুর ৫৮ বছরের শাসনামলে ব্রাজিল তিনটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধে জয়লাভ করে। যুদ্ধগুলো ছিল প্লেটাইন যুদ্ধ, উরুগুয়েইয়ান যুদ্ধ, এবং ওয়ার অফ ট্রিপল অ্যালায়েন্স[৬৭] এছাড়াও পেদ্রুর শাসনামলেই ব্রাজিল রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয়। মূলত সফল নির্বাচন ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়।[৬৮] এই ৫৮ বছরের শাসনামলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনটি ছিল দাস প্রথার বিলোপ সাধন। ১৮৫০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে দাস পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। এর পরেই ব্রাজিল ধীরে ধীরে দাস প্রথা বিলোপের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে,[৬৯] ও শেষ পর্যন্ত ১৮৮৮ সালে সম্পূর্ণরূপে দাস প্রথার বিলোপ সাধিত হয়।[৭০] অবশ্য স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাজিলে দাসদের সংখ্যা ধীরে কমতে শুরু করেছিল। ১৮২৩ সালে মোট জনগণের ২৩% ছিল দাস, আর ১৮৮৭ সালে এই হার নেমে আসে মাত্র ৫%-এ।[৭১]

১৮৮৯ সালে রাজতন্ত্রের অবলোপনের পর[৭২] সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে কেউ ততোটা আগ্রহী ছিল না।[৭৩] দ্বিতীয় পেদ্রু তখনও জনসাধারণের মাঝে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন,[৭৪][৭৫] কিন্তু তাঁর নিজের ইচ্ছাতেই রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে।[৭৬] তাঁর দুই ছেলের মৃত্যুর পর পেদ্রুর মনে হয়েছিল এই রাজত্ব তাঁর মৃত্যুর সাথেই শেষ হয়ে যাবে।[৭৭] রাজত্ব রক্ষার ব্যাপারে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন না।[৭৮][৭৯] তাই তিনি নিজে এটি রক্ষার ব্যাপারে কিছু করেন নি ও কাউকে কিছু করতেও দেন নি। দাস প্রথা বিলোপের সময় এর বিরোধীতাকারীরা সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে যাতে কোনো প্রকার সামরিক ক্যু ঘটাতে না পার তা ঠেকাতেই মূলত তিনি গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হন।[৮০][৮১][৮২]

প্রজাতন্ত্রের প্রাথমিক সময়[সম্পাদনা]

সমসাময়িক যুগ[সম্পাদনা]

ভূ-তত্ত্ব[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: ব্রাজিলের ভূগোল
আরও দেখুন: ভৌগোলিক আয়তন অনুসারে রাষ্ট্রসমূহের তালিকা
ব্রাজিলের টপোগ্রাফিক চিত্র

ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভাগের সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে, সেই সাথে মহাদেশটির সবচেয়ে বেশি অংশটিও এই দেশটির আওতাধীন।[৮৩] ব্রাজিলের দক্ষিণে উরুগুয়ে; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনাপ্যারাগুয়ে; পশ্চিমে বলিভিয়াপেরু; উত্তর-পশ্চিমে কলম্বিয়া; এবং উত্তরে ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা, এবং ফরাসি দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা অবস্থিত। ব্রাজিলের সাথে ইকুয়েডরচিলি ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশের সাথেই সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। ব্রাজিলীয় সীমানায় বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ[৭][৭] এর সুবিশাল আকৃতি, জলবায়ু, এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ব্রাজিলকে ভূ-তাত্ত্বিকভাবে একটি বৈচিত্রময় দেশে পরিণত করেছে।[৮৩] দেশটির আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জগুলো ধরলে ব্রাজিলের সীমানা ২৮° পশ্চিম থেকে ৭৪° পশ্চিম অক্ষরেখা থেকে, ৬° উত্তর থেকে ৩৪° দক্ষিণ দ্রাঘিমা রেখা পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ হিসেবে রাশিয়া, কানাডা, চীন, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ব্রাজিলের অবস্থান। কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এটি আমেরিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এর সর্বমোট আয়তন ৮৫,১৪,৮৭৬.৫৯৯ কিমি (৩২,৮৭,৬১২ মা),[৮৪] যার ভেতর জলভাগের আয়তন প্রায় ৫৫,৪৫৫ কিমি (২১,৪১১ মা)।[৭] দেশটিতে মোট তিনটি সময় অঞ্চল অবস্থিত। পশ্চিমের প্রদেশগুলো ইউটিসি-৪, পূর্বের প্রদেশগুলো ইউটিসি-৩ (এটি একই সাথে ব্রাজিলের সরকারি সময়), এবং আটলান্টিক দ্বীপপুঞ্জগুলো ইউটিসি-২ সময় অঞ্চলের অন্তর্গত।[৮৫]

ব্রাজিলে টপোগ্রাফি যথেষ্ট বৈচিত্রময়। দেশটিতে পাহাড়, পর্বত, সমভূমি, উচ্চভূমি, চরণভূমি প্রভৃতি বৈচিত্রের ভূভাগ বিদ্যমান। এর ভূখণ্ডের বেশিরভাগের উচ্চতা ২০০ মিটার (৬৬০ ফু) থেকে ৮০০ মিটার (২,৬০০ ফু)-এর মধ্যে।[৮৬] দেশটির দক্ষিণ অর্ধাংশেই বেশিরভাগে উচ্চভূমি অবস্থিত।[৮৬] উত্তর-পশ্চিম অংশের সমভূমিগুলো ঢালু ও ভাঙা ভাঙা পাহাড় দিয়ে ঘেরা।[৮৬]

দেশটির দক্ষিণাঞ্চল বেশ অমসৃণ, এবং বেশিরভাগ অঞ্চলই রিজ ও পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। এ অঞ্চলের গড় উচ্চতা ১,২০০ মিটার (৩,৯০০ ফু) পর্যন্ত।[৮৬] এসকল পর্বতমালার মধ্যে রয়েছে মান্তিকিরা, এসপিনাসো পর্বতT এবং সেরা দু মার[৮৬] উত্তরে গুয়াইয়ানা উচ্চভূমি একটি বড় নিষ্কাশন বিভক্তির মাধ্যমে আমাজন বেসিনের দিকে প্রবাহিত নদীগুলো থেকে ভেনেজুয়েলা থেকে উত্তর দিকের ওরিনোকো নদী ব্যবস্থায় এসে সমাপ্ত হওয়া নদীগুলোকে পৃথক করেছে। ব্রাজিলের সর্বোচ্চ পর্বত হচ্ছে পিকু দা নেবলিনা যার উচ্চতা প্রায় ২,৯৯৪ মিটার (৯,৮২৩ ফু), এবং সর্বনিম্ন অঞ্চল হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগর।[৭]

ব্রাজিলে ঘন ও বেশ জটিল নদী ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা বিশ্বের অন্যতম জটিল নদী ব্যবস্থা। ব্রাজিলে মোট আটটি নদী নিষ্কাশন ব্যবস্থা অবস্থিত, যার সবকটি-ই আটলান্টিক মহাসাগরে এসে শেষ হয়েছে।[৮৭] ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাজন, যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী ও নিষ্কাশিত জলের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী। এছাড়াও আছে পারান ও এর গুরুত্বপূর্ণ শাখানদী ইগুয়াসু (ইগুয়াসু জলপ্রপাত সহ), নিগ্রো, সাউঁ ফ্রান্সিসকু, শিজু, মেদেইরা, ও টাপাজুস নদী।[৮৭]

জলবায়ু[সম্পাদনা]

জীববৈচিত্র[সম্পাদনা]

পরিবেশ[সম্পাদনা]

রাজনীতি[সম্পাদনা]

আইন[সম্পাদনা]

বৈদেশিক সম্পর্ক[সম্পাদনা]

সামরিক বাহিনী[সম্পাদনা]

প্রশাসনিক বিভাগ[সম্পাদনা]

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

ব্রাজিলীয় এমব্রেয়ার কোম্পানির ইআরজে-১৩৫ মডেলের বাণিজ্যিক জেট বিমান। ব্রাজিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমান উৎপাদনকারী দেশ

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলবিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ, বাজার বিনিময়ের ভিত্তিতে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম, ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। দেশটির যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যা এর অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, সামনের কয়েক দশকে ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম অর্থনীতির একটি হিসেবে পরিণত হবে।[৮৮] এর বর্তমান গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হচ্ছে ১০,২০০ মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ৬৪তম। ব্রাজিলের বৃহৎ ও উন্নত কৃষি, খনিশিল্প, উৎপাদন ব্যবস্থা, এবং সেবাখাত রয়েছে। সেই সাথে দেশটিতে শ্রমিকের প্রাচুর্যও বিদ্যমান।[৮৯]

ব্রাজিলর রপ্তানিখাত অত্যন্তু দ্রুত বিস্তৃত ও বিকশিত হচ্ছে, এবং টাইকুনের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করছে।[৯০] ব্রাজিলের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গাড়ি, ইথানল, টেক্সটাইল, পাদুকা, লৌহ আকরিক, ইস্পাত, কফি, কমলার রস, সয়াবিন, এবং কর্নড বিফ[৯১] দেশটি ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ ও পণ্যবাজারে নিজের উপস্থিতি আরও বিস্তৃত করে চলেছে। এছাড়াও ব্রাজিল উত্থানশীল অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর সংগঠন ব্রিকের সদস্য।[৯২]

১৯৯৪ সাল থেকে মুদ্রা হিসেবে ব্রাজিলীয় রিয়াল ব্যবহার করে আসছে। ১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া, ১৯৯৮ সালে রাশিয়া,[৯৩] এবং এর রেশ ধরে বহুস্থানে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মুদ্রা নীতি সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে। বিনিময়ের হারের অব্যাহত দরপতনের ফলে সৃষ্ট মুদ্রা সংকট মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িকভাবে মুদ্রা বিনিময় হার নির্দিষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে ব্রাজিল পুনরায় মুক্তবাজার বিনিয়ময় হারে ফিরে যায়।[৯৪]

অর্থনৈতিক জটিলতা কাটিয়ের ওঠার জন্য ব্রাজিল ২০০২-এর মধ্যভাগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৩০.৪ বিলিয়ন ডলারের একটি রেকর্ড পরিমাণ ঋণ সহায়তা লাভ করে।[৯৫] ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকলেও ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যংক ২০০৫ সালেই আইএমএফ-এই ঋণ পরিশোধ করে।[৯৬] সাম্প্রতিককালে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির যেসকল বিষয় মোকাবেলা করেছে তার মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের পুজির পরিমাণ আনুমানের চেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জটিলতা। এর ফলেই ঐ সময়কালে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলীয় রিয়ালের দরপতন ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়।[৯৭] তবে দীর্ঘমেয়াদে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকৃত অর্থ অনুমানের চেয়ে কম হারে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছিল। ২০০৭ সালে এর আনুমানিক পরিমাণ ছিল ১৯৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[৯৮] বর্তমানে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী ঋণে সুদের পরিমাণ মুদ্রানীতির আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশটির মুদ্রস্ফীতির হার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ।[৯৯]

বিষয়বস্তু ও শক্তিখাত[সম্পাদনা]

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি[সম্পাদনা]

পরিবহন[সম্পাদনা]

ফর্তালিজা শহরের বাইরে বিআর-১১৬ মহাসড়ক

ব্রাজিলে বিস্তুত ও বৈচিত্রময় পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান। জনপরিহন ও পণ্যপরিবহনে মূলত সড়ক পথই ব্যবহৃত হয়। ২০০২ সালের হিসাব অনুযায়ী ব্রাজিলের বিদ্যমান সড়ক পথের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার (১২ লক্ষ ৩০ হাজার মাইল)। ১৯৬৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছরে দেশটিতে পাকাকৃত সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৫,৪৯৬ কিলোমিটার (২২,০৫৬ মাইল) থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৮৪,১৪০ কিলোমিটার (১,১৪,৪২৫ মাইল)।[১০০]

সড়ক পথের সম্প্রসারণের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় ১৯৪৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে ব্রাজিলের রেলপরিবহন ব্যবস্থার পরিধি সংকুচিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে দেশটির রেললাইনের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ছিলো ৩১,৮৪৮ কিলোমিটার (১৯,৭৮৯ কিলোমিটার), এবং ২০০২ সালে এসে এই দৈর্ঘ্য হয় ৩০,৮৭৫ কিলোমিটার (১৯,১৮৬)। রেলওয়ে ব্যবস্থার বেশিরভাগ অংশ সরকারি মালিকানাধীন ফেডারেল রেইলরোড কর্পোরেশনের আয়ত্বাধীন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে সরকার ৭টি লাইন বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়।[১০১] সাঁউ পাইলু মেট্রা ব্রাজিলের প্রথম পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থা। অন্যান্য পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে আছে রিউ দি জানেইরু, পর্তু আলেগ্রে, হেসিফি, বেলু হরাইজন্তে, ব্রাসিলিয়া, তেরেসিনা, ফর্তালিজা, এবং সালভাদোর

ব্রাজিলে প্রায় ২,৫০০ বিমানবন্দর ও বিমান অবতরণের স্থান রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।[১০২] সাঁউ পাউলু শহরে কাছে অবস্থিত সাঁউ পাউলু-গুয়ারুলহোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দেশটির অভ্যন্তরীন জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক পরিবহনের একটি বড় ও বৈচিত্রময় অংশ এই বিমানবন্দরে সম্পন্ন হয়। এছাড়াও আন্তজার্তিকভাবে এই বিমান বন্দরটি ব্রাজিলকে বিশ্বের সকল বড় শহরগুলোর সাথে যুক্ত করেছে।[১০৩]

উপকূলের পরিবহন সংযোগগুলো দেশটির স্বত্বন্ত্র অংশ। বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের সান্তোশের বন্দরগুলো মুক্তভাবে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। ব্রাজিলের ৩৬টি গভীর-জল বন্দর রয়েছে যার মধ্যে সান্তোশ, ইতাজাই, রিউ গ্রাঁদ, পারানাগুয়া, রিউ দি জানেইরু, সেপেতিবা, ভিতোরিয়া, সাউপে, মানাউশ, এবং সাঁউ ফ্রান্সিসকো দু সুই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।[১০৪]

জনপরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

আরও দেখুন: ব্রাজিলে অভিবাসন এবং ব্রাজিলের মিউনিসিপ্যালিটিসমূহ
বর্ণ/জাতি (২০০৮)
শেতাঙ্গ ৪৮.৪৩%
বাদামী (মিশ্র) ৪৩.৮০%
কৃষ্ণাঙ্গ ৬.৪৮%
এশীয় ০.৫৮%
আমেরিন্ডিয়ান ০.২৮%

২০০৮ সালের গণনা অনুযায়ী ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি।[১০৫] জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২২.৩১ জন, এবং পুরুষ ও নারীর অনুপাত ০.৯৫:১।[১০৬] মোট জনসংখ্যার ৮৩.৭৫% ভাগ শহরাঞ্চলে বসবাস করে।[১০৭] ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ বাস দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব (৭ কোটি ৯৮ লক্ষ) ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (৫ কোটি ৩৫ লক্ষ)। যদিও ভৌগোলিকভাবে দেশটির সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে এর মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল, যা ব্রাজিলের মোট ভূখণ্ডের ৬৪.১২% ভাগ দখল করে আছে, কিন্তু সে অঞ্চলগুলোতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৯১ লক্ষ।

মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় ১৯৪০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। যদিও এ সময় জন্মহারও সামান্য পরিমাণে হ্রাস পায়। ১৯৪০-এর দশকে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ২.৪%। ১৯৫০-এর দশকে এসে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩.০%; ও ১৯৬০-এর দশকে এই হার ছিল ২.৯%। এ বছরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৪৪ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ বছরে উন্নীত হয়।[১০৮] ২০০৭ সালে এসে ব্রাজিলের মানুষের গড় আয়ু হয় ৭২.৬ বছর।[১০৯] ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৫০-৫০-এর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৩.০৪%। ২০০৮ সালে এসে এ হার দাঁড়ায় মাত্র ১.০৫%-এ। ধারণা করা হয়, এমনভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক অংকে পৌঁছাবে, এবং হার হবে -০.২৯%।[১১০][১১১]

ব্রাজিলের ইন্সটিটিউট অফ জিওগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের ২০০৮ সালের গণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যার ৪৮.৪৩% ভাগ (প্রায় ৯ কোটি ২০ লক্ষ) নিজেদেরকে শেতাঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করেছে; এবং ৪৩.৮০% ভাগ বাদামী (মিশ্র) (প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ), ৬.৮৪% কৃষ্ণাঙ্গ (১ কোটি ৩০ লক্ষ), ০.৫৮% এশীয় (১১ লক্ষ), এবং ০.২৮% নিজেদের আমেরিন্ডিয়ান (৫ লক্ষ ৩৬ হাজার) হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে ০.০৭% (প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার) মানুষ নিজেদের বর্ণ পরিচয় দেয়নি।[১১২]

২০০৭ সালে জাতীয় ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে ব্রাজিলে ৬৭টি ভিন্ন উপজাতীয় গোত্রের অবস্থান উল্লেখ করা হয়, যাঁদের সাথে কোনো রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ নেই। ২০০৪ সালে যোগাযোগহীন এসকল গোত্রের সংখ্যা ছিল ৪০। ব্রাজিলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অযোগাযোগকৃত মানুষের বাস করে বলে ধারণা করা হয়।[১১৩]

ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ দেশটির আদিবাসী জনগণ, পর্তুগিজ উপনিবেশক, এবং আফ্রিকান দাসদের বংশদ্ভূত।[১১৪] ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজদের আগমনের পর থেকে এই তিন জাতির মাঝে বৈবাহিক সম্পর্কের সৃষ্টি হতে থাকে, যা ব্রাজিলকে একটি বৈচিত্রময় জাতিসত্ত্বা উপহার দিয়েছে। ব্রাজিলের বাদামী বর্ণের জনগোষ্ঠীর (পর্তুগিজ ভাষায় এদেরকে ‘প্রাদু’ (prado) নামে সম্বোধন করা হয়[১১৫][১১৬]) বিভিন্ন ভাগের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাগ গুলোর মধ্যে আছে শেতাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাবোক্লু’ (Caboclo), শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বংশদ্ভূত ‘মুলাতু’ (Mulatto), এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাফুজু’ (Cafuzo)।[১১৪][১১৫][১১৬][১১৭][১১৮][১১৯] বেশিরভাগ কাবোক্লু জনগণ দেশটির উত্তর, উত্তর-পূর্ব, এবং মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে।[১২০] গরিষ্ঠ সংখ্যাক মুলাতু জনগণ বাস করে বায়া ও থেকে পারাইবা পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘেঁষে চলে আসা পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল,[১১৯][১২১] উত্তর মারানাউঁ,[১২২][১২৩] দক্ষিণ মিনাস জেরাইস[১২৪] এবং পূর্ব রিউ দি জানেইরু অঞ্চলে।[১১৯][১২৪] ১৯শ শতক থেকে অভিবাসীদের জন্য ব্রাজিলের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ১৮০৮ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ব্রাজিলে বিশ্বের ৬০টি দেশ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটে। এসকল অভিবাসীর বেশিরভাগই এসেছিল পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, জাপান, এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।[১২৫]

২০০৮ সালে ব্রাজিলে সার্বিক নিরক্ষরতার হার ছিল ১১.৪৮%,[১২৬] এবং তরুণদের ভেতর (বয়স ১৫–১৯) এই হার ছিল ১.৭৪%। এই হার সবচেয়ে বেশি ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (২০.৩০%), যেখানে বেশ বড় সংখ্যক গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস।[১২৭] গড় হিসাবে নিরক্ষতার হার গ্রামীণ জনগণের মাছে বেশি (২৪.১৮%) ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মাঝে কম (৯.০৫%)।[১২৮]

ধর্ম[সম্পাদনা]

নগরায়ণ[সম্পাদনা]

ভাষা[সম্পাদনা]

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

কার্নিভালে সাম্বা স্কুল প্যারেডের সাম্বা নৃত্য উপস্থাপন। কার্নিভাল ও সাম্বা নৃত্য বহিঃবিশ্বের কাছে ব্রাজিলের সংস্কৃতির সবচেয়ে পরিচিত অংশগুলোর একটি।

তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পতুগিজ ঔপনিবেশকদের শাসনের ফলে, ব্রাজিলের সংস্কৃতির মূল অংশটি এসেছে পর্তুগালের সংস্কৃতি থেকে। পর্তুগিজরা ব্রাজিলের সংস্কৃতির যেসকল স্থানে প্রভাব ফেলেছে তার মধ্যে আছে পর্তুগিজ ভাষা, ক্যাথলিক ধর্ম, এবং ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশিল্প।[১২৯] এছাড়াও ব্রাজিলের সংস্কৃতি আফ্রিকান, ও আদিবাসী ইন্ডিয়ানের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দ্বারাও বেশ প্রভাবান্বিত হয়েছে।[১৭] এছাড়া ব্রাজিলে অভিবাসী হিসেবে আসা ইতালীয়, জার্মান, ও অন্যান্য ইউরোপীয় অভিবাসীদের সংস্কৃতিও ব্রাজিলীয় সংস্কৃতিতে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করেছে। ১৮-১৯শত শতকের দিকে দলে দলে আসা এ সকল অভিবাসীরা ব্রাজিলের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বসবাস করা শুরু করেছিল, এবং বর্তমানেও ঐ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।[১৩০] তবে সামগ্রিকভাবে আদিবাসী আমেরিন্ডিয়ানরা ব্রাজিলের ভাষা ও রন্ধনশিল্পে প্রভাব ফেলেছে; অপরদিকে আফ্রিকানরা প্রভাব ফেলেছে ব্রাজিলের রন্ধনশৈলী, সঙ্গীত, নৃত্যকলা, ও ধর্মে।[১৩১]

১৬শ শতকের পর থেকে ব্রাজিলীয় চিত্রকলা বিভিন্ন ধারায় বিস্তৃত হতে থাকে। পূর্বে ব্রাজিলের চিত্রকলায় বারুকি ধারার প্রভাব ছিল খুব বেশি,[১৩২][১৩৩] কিন্তু ১৬শ শতকের পর বারুকি থেকে তা রোমান্টিকতা, আধুনিকতা, অভিব্যাক্তিবাদ, কিউবিজম, পরাবাস্তবাদ, বিমূর্তবাদ প্রভৃতি দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

ব্রাজিলীয় চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয় ১৯শ শতকের শেষ দিকে। অনেক অভ্যন্তরীণ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রাজিলের চলচ্চিত্র দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে।[১৩৪]

সঙ্গীত[সম্পাদনা]

সাহিত্য[সম্পাদনা]

রন্ধনশিল্প[সম্পাদনা]

খেলাধুলা[সম্পাদনা]

ফুটবল খেলাই ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে চিহ্নিত। দলটি এ পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়লাভ করেছে যা একটি রেকর্ড।[১৩৫]

ভলিবল, বাস্কেটবল, অটো রেসিং এবং মার্শাল আর্ট ক্রীড়াও ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়। ব্রাজিলের পুরুষ জাতীয় ভলিবল দলটি ওয়ার্ল্ড লীগ, বিশ্ব ভলিবল গ্রাঁ চ্যাম্পিয়ন্স কাপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ এবং বিশ্বকাপের বর্তমানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। ব্রাজিলের অন্যান্য খেলার মধ্যে রয়েছে - টেনিস, হ্যান্ডবল, সুইমিং এবং জিমন্যাসটিক্‌স যা গত কয়েক দশক ধরে চর্চা হচ্ছে। ব্রাজিলে বেশকিছু ক্রীড়ার উদ্ভব ঘটেছে। তন্মধ্যে - বীচ ভলিবল[১৩৬], ফুটসাল[১৩৭] এবং ফুটভলি অন্যতম। মার্শাল আর্টে ক্যাপোইরা[১৩৮], ভ্যালে টুডো[১৩৯] এবং ব্রাজিলিয়ান জি-জিতসু[১৪০] ক্রীড়ার প্রচলন ঘটিয়েছে। অটো রেসিংয়ে এ পর্যন্ত তিনজন ব্রাজিলীয় ড্রাইভার ফর্মুলা ওয়ানে আটবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছে।[১৪১][১৪২][১৪৩]

শহর[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Demographics"। Brazilian Government। আসল থেকে ১৭ নভেম্বর ২০১১-এ আর্কাইভ করা। সংগৃহীত ৮ অক্টোবর ২০১১ 
  2. "Caracteristicas da População e dos Domicílios do Censo Demográfico 2010 — Cor ou raça" (PDF)। সংগৃহীত ৭ এপ্রিল ২০১২ 
  3. http://www.census.gov/popclock/
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ <ref> ট্যাগ; imf নামের ref গুলির জন্য কোন টেক্সট প্রদান করা হয়নি
  5. As on for example the national website.
  6. Mugnier, Clifford (জানুয়ারি ২০০৯)। Grids & Datums – Federative Republic of Brazil 
  7. ৭.০ ৭.১ ৭.২ ৭.৩ ৭.৪ ৭.৫ ৭.৬ ৭.৭ ৭.৮ "Geography of Brazil"The World Factbook। Central Intelligence Agency। ২০০৮। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৩ 
  8. "People of Brazil"The World Factbook। Central Intelligence Agency। ২০০৮। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৩ 
  9. ৯.০ ৯.১ "Introduction of Brazil"The World Factbook। Central Intelligence Agency। ২০০৮। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৩ 
  10. ১০.০ ১০.১ "Brazilian Federal Constitution" (Portuguese ভাষায়)। Presidency of the Republic। ১৯৮৮। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৩  "Brazilian Federal Constitution"। v-brazil.com। ২০০৭। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৩। "Unofficial translate" 
  11. "Territorial units of the municipality level" (Portuguese ভাষায়)। Brazilian Institute of Geography and Statistics। ২০০৮। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৩ 
  12. "CIA – The World Factbook – Country Comparisons – GDP (purchasing power parity)"। Cia.gov। সংগৃহীত ২৫ জানুয়ারি ২০১১ 
  13. "World Development Indicators database" (PDF file), World Bank, 7 October 2009.
  14. Clendenning, Alan (২০০৮-০৪-১৭)। "Booming Brazil could be world power soon"USA Today – The Associated Press। পৃ: ২। সংগৃহীত ২০০৮-১২-১২ 
  15. ১৫.০ ১৫.১ Boxer, p. 110
  16. ১৬.০ ১৬.১ Skidmore, p. 34.
  17. ১৭.০ ১৭.১ "People and Society"Encarta। MSN। আসল থেকে ২০০৯-১০-৩১-এ আর্কাইভ করা। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-১০ 
  18. BRASIL CULTURA | O site da cultura brasileira
  19. ১৯.০ ১৯.১ (পর্তুগিজ) Eduardo Bueno, Brasil: uma História (São Paulo: Ática, 2003; ISBN 85-08-08213-4), p.36.
  20. CNRTL – Centre National de Ressources Textuelles et Lexicales (ফরাসি)
  21. Michaelis – Moderno Dicionário da Língua Portuguesa (পর্তুগিজ)
  22. iDicionário Aulete (পর্তুগিজ)
  23. (পর্তুগিজ) "República Federativa do Brasil." Consulted on October 9, 2010.
  24. [Tolkien, J. R. R., On Fairy Stories, (London: George Allen & Unwin, 1964) p. 13. ],- Tolkien refers to the theory as well established in his 1947 essay.
  25. Boxer, p. 98.
  26. ২৬.০ ২৬.১ Boxer, p. 100.
  27. Boxer, pp. 100–101.
  28. ২৮.০ ২৮.১ Skidmore, p. 27.
  29. Boxer, p. 101.
  30. Boxer, p. 108
  31. ৩১.০ ৩১.১ Boxer, p. 102.
  32. Skidmore, pp. 30, 32.
  33. Skidmore, p. 36.
  34. Skidmore, pp. 32–33.
  35. Bueno, pp. 80–81.
  36. Facsimiles of multiple original documents relating about the events in Brazil in the 17th century that led to a Dutch influence and their final defeat
  37. Calmon, p. 294.
  38. Bueno, p. 86.
  39. Boxer, p. 164.
  40. Boxer, pp. 168, 170.
  41. Boxer, p. 169.
  42. Boxer, p. 207.
  43. ৪৩.০ ৪৩.১ Boxer, p. 213.
  44. Bueno, p. 145.
  45. Calmon (2002), p. 191.
  46. Barman (1999), pp.18, 27
  47. Lustosa, pp. 109–110
  48. Lustosa, pp. 117–119
  49. Lustosa, pp. 150–153
  50. Vianna, p. 418
  51. Hendrik Kraay apud Lorenzo Aldé, Revista de História da Biblioteca Nacional, issue 50, year 5 (Rio de Janeiro: SABIN, 2009), p. 20
  52. Sérgio Buarque de Holanda, O Brasil Monárquico: o processo de emancipação, 4th ed. (São Paulo: Difusão Européia do Livro, 1976), p. 403
  53. Diégues 2004, pp. 168, 164, 178
  54. Diégues 2004, pp. 179–180
  55. Lustosa, p. 208
  56. Vianna, p. 140
  57. José Murilo de Carvalho, A Monarquia brasileira (Rio de Janeiro: Ao Livro Técnico, 1993), p. 23
  58. Calmon (2002), p. 189
  59. Vainfas, p. 170
  60. Lyra (v.1), p. 17
  61. Carvalho 2007, p. 21
  62. Miriam Dohlnikoff, Pacto imperial: origens do federalismo no Brasil do século XIX (São Paulo: Globo, 2005), p. 206
  63. Carvalho (2007), p. 43
  64. Souza, p. 326
  65. Janotti, pp. 171–172
  66. Munro, p. 273
  67. Lyra (v.1), pp. 164, 225, 272
  68. Carvalho (2007), pp. 9, 222
  69. Lyra (v.1), p. 166
  70. Lyra (v.3), p. 62
  71. Vainfas, p. 18
  72. Munro, p. 280
  73. George Ermakoff, Rio de Janeiro – 1840–1900 – Uma crônica fotográfica (Rio de Janeiro: G. Ermakoff Casa Editorial, 2006), p. 189
  74. Schwarcz, p. 444
  75. Vainfas, p. 201
  76. Barman (1999), p. 399
  77. Barman (1999), p. 130
  78. Lyra (v.3), p. 126
  79. Barman (1999), p. 361
  80. Ricardo Salles, Nostalgia Imperial (Rio de Janeiro: Topbooks, 1996), p. 194 – However, the monarchist reaction after the fall of the empire and the subsequent exile of the Imperial Family "was not small and even less was its repression".
  81. Lyra (v.3), p. 99
  82. Schwarcz, pp. 450, 457
  83. ৮৩.০ ৮৩.১ "Land and Resources"Encarta। MSN। আসল থেকে ২০০৯-১০-৩১-এ আর্কাইভ করা। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-১১ 
  84. Official Area (In Portuguese) IBGE: Instituto Brasileiro de Geografia e Estatística. Retrieved 2010-01-08.
  85. "Hora Legal Brasileira"। Observatório Nacional। সংগৃহীত ২০০৯-০২-২১ 
  86. ৮৬.০ ৮৬.১ ৮৬.২ ৮৬.৩ ৮৬.৪ "Natural Regions"Encarta। MSN। আসল থেকে ২০০৯-১০-৩১-এ আর্কাইভ করা। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-১১ 
  87. ৮৭.০ ৮৭.১ "Rivers and Lakes"Encarta। MSN। আসল থেকে ২০০৯-১০-৩১-এ আর্কাইভ করা। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-১১ 
  88. The N-11: More Than an Acronym। Goldman Sachs। সংগৃহীত ২০১০-০৩-১৭ 
  89. "Economy of Brazil"The World Factbook। Central Intelligence Agency। ২০০৮। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৩ 
  90. Phillips, Tom (২০০৮-০৫-১০)। "The country of the future finally arrives"The Guardian (London)। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  91. "The economy of heat"। The Economist। ২০০৭-০৪-১২। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  92. O'Neill, Jim"BRICs"। Goldman Sachs। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  93. Baig, Taimur; Goldfajn, Ilan (২০০০)। "The Russian default and the contagion to Brazil" (PDF)। IMF Working Paper। International Monetary Fund। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  94. Fraga, Arminio (২০০০)। "Monetary Policy During the Transition to a Floating Exchange Rate: Brazil's Recent Experience"। International Monetary Fund। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  95. Wheatley, Jonathan (২০০২-০৯-০২)। "Brazil: When an IMF Bailout Is Not Enough"। Business Week। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  96. "Brazil to pay off IMF debts early"। BBC News। ২০০৫-১২-১৪। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  97. "Economic Quarterly" (PDF)। Institute of Applied Economic Research। ২০০৭-০৩-০১। পৃ: 171। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  98. "Capital Flows to Emerging Markets Set at Close to Record Levels" (Press release)। The Institute of International Finance। ২০০৭-০৫-৩১। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  99. "IPCA, IPC-FIPE and IPC-BR: Methodological and Empirical Differences" (PDF)। Central Bank of Brazil। ২০০৪। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  100. "Road system in Brazil"। Nationsencyclopedia.com। সংগৃহীত ২০১০-১০-৩০ 
  101. "Brazil – Transportation," Encyclopedia of the Nations (nationsencyclopedia.com).[সন্দেহপূর্ণ ]
  102. "Ociosidade atinge 70% dos principais aeroportos." globo.com, 12 August 2007. (পর্তুগিজ)
  103. "Aeroporto Internacional de São Paulo/Guarulhos-Governador André Franco Montoro[অকার্যকর সংযোগ]," infraaero.gov.br. (পর্তুগিজ)
  104. "Mercado Brasileiro Terminais de Contêineres," Santos Brasil. (পর্তুগিজ)
  105. 2008 PNAD, IBGE. "População residente por situação, sexo e grupos de idade"
  106. 2008 PNAD, IBGE. "População residente por situação, sexo e grupos de idade"
  107. 2008 PNAD, IBGE. "População residente por situação, sexo e grupos de idade."
  108. José Alberto Magno de Carvalho, "Crescimento populacional e estrutura demográfica no Brasil" Belo Horizonte: UFMG/Cedeplar, 2004 (PDF file), p.  5.
  109. "Instituto Brasileiro de Geografia e Estatística"। IBGE। ১৯৯৯-১১-২৯। সংগৃহীত ২০১০-০১-২৫ 
  110. "Projeусo da Populaусo do Brasil"। IBGE। সংগৃহীত ২০১০-০১-২৫ 
  111. Magno de Carvalho, "Crescimento populacional e estrutura demográfica no Brasil," pp. 7–8.
  112. 2008 PNAD, IBGE. "População residente por cor ou raça, situação e sexo."
  113. "In Amazonia, Defending the Hidden Tribes," The Washington Post, 8 July 2007.
  114. ১১৪.০ ১১৪.১ Enciclopédia Barsa vol. 4, p. 230.
  115. ১১৫.০ ১১৫.১ Coelho (1996), p. 268.
  116. ১১৬.০ ১১৬.১ Vesentini (1988), p. 117.
  117. Adas, Melhem. Panorama geográfico do Brasil, 4th ed (São Paulo: Moderna, 2004), p. 268
  118. Azevedo (1971), pp. 2–3.
  119. ১১৯.০ ১১৯.১ ১১৯.২ Moreira (1981), p. 108.
  120. Enciclopédia Barsa, vol. 4, pp. 254–55, 258, 265.
  121. Azevedo (1971), pp. 74–75.
  122. Enciclopédia Barsa, vol. 10 (Rio de Janeiro: Encyclopaedia Britannica do Brasil, 1987), p. 355.
  123. Azevedo (1971), p. 74.
  124. ১২৪.০ ১২৪.১ Azevedo (1971), p. 161.
  125. Maria Stella Ferreira-Levy, "O papel da migração internacional na evolução da população brasileira (1872 a 1972), Revista de Saúde Pública Volume 8, suplemento. June 1974. ) (1974). Table 2, p.  74. (পর্তুগিজ) Available here [১] at scielo.br as a PDF file.
  126. PNAD 2008, IBGE. "Pessoas de 5 anos ou mais de idade por situação, sexo, alfabetização e grupos de idade e grupos de idade."
  127. PNAD 2008, IBGE. "Pessoas de 5 anos ou mais de idade por situação, sexo, alfabetização e grupos de idade"
  128. PNAD 2008, IBGE. "Pessoas de 5 anos ou mais de idade por situação, sexo e alfabetização."
  129. "15th–16th Century"History। Brazilian Government official website। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৮ 
  130. "Population"Encarta। MSN। আসল থেকে ২০০৯-১০-৩১-এ আর্কাইভ করা। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-১০ 
  131. Freyre, Gilberto (১৯৮৬)। "The Afro-Brazilian experiment: African influence on Brazilian culture"। UNESCO। আসল থেকে ২০১২-০৫-৩০-এ আর্কাইভ করা। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৮ 
  132. Leandro Karnal, Teatro da fé: Formas de representação religiosa no Brasil e no México do século XVI (São Paulo, Editora Hucitec, 1998; available here [২].
  133. "The Brazilian Baroque," Encyclopaedia Itaú Cultural
  134. "Theater and Film"Encarta। MSN। আসল থেকে ২০০৯-১০-৩১-এ আর্কাইভ করা। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৮ 
  135. "Football in Brazil". Goal Programme. International Federation of Association Football. 2008-04-15. Retrieved 2008-06-06.
  136. "Beach Soccer". International Federation of Association Football. Retrieved 2008-06-06.
  137. "Futsal". International Federation of Association Football. Retrieved 2008-06-06.
  138. "The art of capoeira"। BBC। ২০০৬-০৯-২০। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  139. "Brazilian Vale Tudo"। I.V.C। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  140. "Brazilian Jiu-Jitsu Official Website"। International Brazilian Jiu-Jitsu Federation। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  141. Donaldson, Gerald। "Emerson Fittipaldi"Hall of Fame। The Official Formula 1 Website। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  142. Donaldson, Gerald। "Nelson Piquet"Hall of Fame। The Official Formula 1 Website। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 
  143. Donaldson, Gerald। "Ayrton Senna"Hall of Fame। The Official Formula 1 Website। সংগৃহীত ২০০৮-০৬-০৬ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Azevedo, Aroldo. O Brasil e suas regiões. São Paulo: Companhia Editora Nacional, 1971. (পর্তুগিজ)
  • Barman, Roderick J. Citizen Emperor: Pedro II and the Making of Brazil, 1825–1891. Stanford: Stanford University Press, 1999. ISBN 0-8047-3510-7 (ইংরেজি)
  • Boxer, Charles R.. O império marítimo português 1415–1825. São Paulo: Companhia das Letras, 2002. ISBN 85-359-0292-9 (পর্তুগিজ)
  • Bueno, Eduardo. Brasil: uma História. São Paulo: Ática, 2003. (পর্তুগিজ) ISBN 85-08-08213-4
  • Calmon, Pedro. História da Civilização Brasileira. Brasília: Senado Federal, 2002. (পর্তুগিজ)
  • Carvalho, José Murilo de. D. Pedro II. São Paulo: Companhia das Letras, 2007. (পর্তুগিজ)
  • Coelho, Marcos Amorim. Geografia do Brasil. 4th ed. São Paulo: Moderna, 1996. (পর্তুগিজ)
  • Diégues, Fernando. A revolução brasílica. Rio de Janeiro: Objetiva, 2004. (পর্তুগিজ)
  • Enciclopédia Barsa. Volume 4: Batráquio – Camarão, Filipe. Rio de Janeiro: Encyclopædia Britannica do Brasil, 1987. (পর্তুগিজ)
  • Fausto, Boris and Devoto, Fernando J. Brasil e Argentina: Um ensaio de história comparada (1850–2002), 2nd ed. São Paulo: Editoria 34, 2005. ISBN 85-7326-308-3(পর্তুগিজ)
  • Gaspari, Elio. A ditadura envergonhada. São Paulo: Companhia das Letras, 2002. ISBN 85-359-0277-5 (পর্তুগিজ)
  • Janotti, Aldo. O Marquês de Paraná: inícios de uma carreira política num momento crítico da história da nacionalidade. Belo Horizonte: Itatiaia, 1990. (পর্তুগিজ)
  • Lyra, Heitor. História de Dom Pedro II (1825–1891): Ascenção (1825–1870). v.1. Belo Horizonte: Itatiaia, 1977. (পর্তুগিজ)
  • Lyra, Heitor. História de Dom Pedro II (1825–1891): Declínio (1880–1891). v.3. Belo Horizonte: Itatiaia, 1977. (পর্তুগিজ)
  • Lustosa, Isabel. D. Pedro I: um herói sem nenhum caráter. São Paulo: Companhia das letras, 2006. ISBN 85-359-0807-2 (পর্তুগিজ)
  • Moreira, Igor A. G. O Espaço Geográfico, geografia geral e do Brasil. 18. Ed. São Paulo: Ática, 1981. (পর্তুগিজ)
  • Munro, Dana Gardner. The Latin American Republics; A History. New York: D. Appleton, 1942. (ইংরেজি)
  • Schwarcz, Lilia Moritz. As barbas do Imperador: D. Pedro II, um monarca nos trópicos. 2nd ed. São Paulo: Companhia das Letras, 1998. ISBN 85-7164-837-9 (পর্তুগিজ)
  • Skidmore, Thomas E. Uma História do Brasil. 4th ed. São Paulo: Paz e Terra, 2003. (পর্তুগিজ) ISBN 85-219-0313-8
  • Souza, Adriana Barreto de. Duque de Caxias: o homem por trás do monumento. Rio de Janeiro: Civilização Brasileira, 2008. (পর্তুগিজ) ISBN 9788520008645
  • Vainfas, Ronaldo. Dicionário do Brasil Imperial. Rio de Janeiro: Objetiva, 2002. ISBN 85-7302-441-0 (পর্তুগিজ)
  • Vesentini, José William. Brasil, sociedade e espaço – Geografia do Brasil. 7th Ed. São Paulo: Ática, 1988. (পর্তুগিজ)
  • Vianna, Hélio. História do Brasil: período colonial, monarquia e república, 15th ed. São Paulo: Melhoramentos, 1994. (পর্তুগিজ)

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Alves, Maria Helena Moreira (1985). State and Opposition in Military Brazil. Austin, TX: University of Texas Press.
  • Amann, Edmund (1990). The Illusion of Stability: The Brazilian Economy under Cardoso. World Development (pp. 1805–1819).
  • ‘Background Note: Brazil’. US Department of State. Retrieved 2011-06-16.
  • Bellos, Alex (2003). Futebol: The Brazilian Way of Life. London: Bloomsbury Publishing plc.
  • Bethell, Leslie (1991). Colonial Brazil. Cambridge: CUP.
  • Costa, João Cruz (1964). A History of Ideas in Brazil. Los Angeles, CA: University of California Press.
  • Fausto, Boris (1999). A Concise History of Brazil. Cambridge: CUP.
  • Furtado, Celso. The Economic Growth of Brazil: A Survey from Colonial to Modern Times. Berkeley, CA: University of California Press.
  • Leal, Victor Nunes (1977). Coronelismo: The Municipality and Representative Government in Brazil. Cambridge: CUP.
  • Malathronas, John (2003). Brazil: Life, Blood, Soul. Chichester: Summersdale.
  • Martinez-Lara, Javier (1995). Building Democracy in Brazil: The Politics of Constitutional Change. Macmillan.
  • Prado Júnior, Caio (1967). The Colonial Background of Modern Brazil. Los Angeles, CA: University of California Press.
  • Schneider, Ronald (1995). Brazil: Culture and Politics in a New Economic Powerhouse. Boulder Westview.
  • Skidmore, Thomas E. (1974). Black Into White: Race and Nationality in Brazilian Thought. Oxford: Oxford University Press.
  • Wagley, Charles (1963). An Introduction to Brazil. New York, New York: Columbia University Press.
  • The World Almanac and Book of Facts: Brazil. New York, NY: World Almanac Books. 2006.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]