রেড আর্মি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সোভিয়েত ইউনিয়ন

এই নিবন্ধটি ধারাবাহিক অংশ হল:

সোভিয়েত ইউনিয়নের
রাজনীতি ও সরকার



মানচিত্রাবলী
 

রেড আর্মি (রুশ: Рабоче-крестьянская Красная армия; РККА বা Rabočě-krěst'janskaja Krasnaja armija) সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপ্লবাত্মক সমাজতান্ত্রিক যোদ্ধাদের দল যারা ১৯১৮-১৯২২ সালে ছড়িয়ে পড়া রুশ গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতীয় পর্যায়ের সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৩০-এর দশকে রেড আর্মি বা লাল ফৌজ বিশ্বের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রেড আর্মি শব্দগুচ্ছটি ব্যাপকভাবে ব্যবহারসহ বিরাট পরিচিতি লাভ করেছিল।

যে সকল জনগণ সমাজতন্ত্রকে পছন্দ করতেন না তারা রেড আর্মি শব্দটি ব্যবহার করেন। যে-কোন ধরনের বামপন্থীদেরকে নির্দেশ করার জন্য রেড আর্মি শব্দ ব্যবহার করা হয়। তাদের ভাষায় রেড আর্মি হচ্ছে সমাজতন্ত্রে উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য মূল্য প্রদান করা।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ভালকান ফ্যাক্টরীতে রেড গার্ডের একটি দল

সেপ্টেম্বর, ১৯১৭ সালে ভি. আই. লেনিন লিখেছিলেন,[১]

পুলিশ বাহিনীকে পুণঃস্থাপন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে জনগণের মাঝখান থেকে যুদ্ধবিদ্যায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ। তারা সামরিক বাহিনীর সাথে মিশে একীভূত হয়ে যাবে।

একই সময়ে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ইম্পেরিয়াল রাশান আর্মির অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছিল। রুশ সাম্রাজ্যের পুরুষ জনগোষ্ঠীর ২৩% সৈনিক হিসেবে যোগদান করেছিলেন যার সংখ্যা প্রায় ১৯ মিলিয়ন। তাদের অধিকাংশের কাছেই কোন অস্ত্র ছিল না। তারা দূরবর্তী সেনা ঘাঁটি থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতো। জার জেনারেল নিকোলাই ডুখুনিন হিসেব করে দেখলেন যে, ২ মিলিয়ন সৈনিক পলাতক অবস্থায় রয়েছে, ১.৮ মিলিয়ন মারা গেছেন, ৫ মিলিয়ন আহত অবস্থায় এবং ২ মিলিয়ন কারাগারে বন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। ১০ মিলিয়ন ব্যক্তি অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে রয়েছেন।[২]

কমিশারদের জনসংঘ ২৮ জানুয়ারি, ১৯১৮ সালে রেড আর্মি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।[৩] তাদের ধারনামাফিক রেড আর্মি গঠন হবে শ্রেণী-সচেতন এবং শ্রমিক শ্রেণীর সেরা উপাদানগুলো নিয়ে। রুশ প্রজাতন্ত্রের আঠার বছর বয়সের ঊর্ধ্বেকার সকল জনগোষ্ঠী এর সদস্য হবে। অক্টোবর বিপ্লব, সোভিয়েত ক্ষমতা গ্রহণ এবং সমাজতান্ত্রিক ধারা প্রবর্তনে এর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয় ও অনবদ্য।

সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী রঙের মাধ্যমে রেড আর্মিকে চিত্রিত করা হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৬ সালে বিপ্লবের প্রতীককে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ঐদিনই রেড আর্মি'র নতুন নামকরণ করা হয় সোভিয়েত আর্মি (Советская Армия, Sovetskaya Armiya)।

চীন-সোভিয়েত যুদ্ধ[সম্পাদনা]

চীন প্রজাতন্ত্র আগ্রাসী মনোভাবসম্পন্ন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯২৯ সালে চীন-সোভিয়েত যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ফলাফলস্বরূপ ১৯৩৭ সালে জিনজিয়াং যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত ইউনিয়ন জিনজিয়াং অঞ্চল দখল করে। রেড আর্মি তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষমতা অর্জন করে। তারা মাঞ্চুরিয়ান চীনের পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণ ভার নেয় এবং জিনজিয়াংয়ে সফলতার সাথে প্রাক-সোভিয়েত ক্ষমতা প্রয়োগ করে।[৪]

শীতকালীন যুদ্ধ[সম্পাদনা]

মার্চ, ১৯৪০ সালে রেড আর্মি সৈনিকেরা কুক্ষিগত ফিনিশ ব্যানার প্রদর্শন করছে।

শীতকালীন যুদ্ধে (ফিনীয়: talvisota, সুয়েডীয়: vinterkriget, রুশ: Зимняя война)[৫] সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ফিনল্যান্ড একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার মাত্র ৩ মাস পূর্বে ৩০ নভেম্বর, ১৯৩৯ সালে সোভিয়েত আক্রমণের মাধ্যমে এর সূচনা ঘটে। সোভিয়েতদের অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে পোল্যান্ড দখল হয়ে যায়। ১৩ মার্চ, ১৯৪০ সালে মস্কো শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শীতকালীন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এর প্রেক্ষাপটে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ সোভিয়েত আক্রমণকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করে। ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে জাতিপুঞ্জ থেকে বহিষ্কার করা হয়।[৬]

সোভিয়েত বাহিনী ফিনদের তুলনায় - তিন গুণ বেশী সৈনিক ছিল, ত্রিশ গুণ বেশী বিমান এবং শতগুণ বেশী ট্যাঙ্ক নিয়ে আক্রমণে অগ্রসর হয়। যুদ্ধ শুরু হবার পূর্ব মুহুর্তে স্বলকালের জন্যে ১৯৩৭ সালে সোভিয়েত নেতা ইওসিফ স্তালিনের গ্রেট পার্জ নীতি গ্রহণের ফলে রেড আর্মি তাদের নৈতিক মনোবল ও দক্ষতা হারায়।[৭] ত্রিশ হাজারেরও অধিক সেনা কর্মকর্তা প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হন কিংবা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। তাদের অধিকাংশই ছিল শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা। এরফলে, ১৯৩৯ সালে রেড আর্মিতে অনভিজ্ঞ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা অধিষ্ঠিত হয়েছিল।[৮][৯]:56 এসকল কারণে এবং উচ্চ প্রত্যাশা ও শক্ত নৈতিক মনোবলের কারণে ফিনিশ বাহিনী সোভিয়েত অধিগ্রহণের কার্যকালকে বিলম্বিত করতে সক্ষম হয় যা সোভিয়েতদের ভাবনার বিপরীত চিত্র ছিল। প্রথম তিন-চার মাসে ফিনিশ বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে রেড আর্মির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়, যার তুলনায় তাদের কম ক্ষতি হয়েছিল।[৯]:79–80

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপীয় অঞ্চলে মিত্রশক্তির বিজয়ের সাথে রেড আর্মির নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং সমগ্র বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পায়। তারা প্রায় ৮০% একীভূত জার্মান সেনাবাহিনী উয়েমা এবং পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে অধিকাংশ নাৎসী বাহিনীর সাজস্তাফেল শাখা কর্তৃক সৃষ্ট বাফেন-এসএস সদস্যদেরকে পরাভূত করেছিল।[১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. 'Tasks of the Proletariat in our Revolution', Collected Works, Vol. 24, pp. 55–91 accessed 29 May 2010
  2. The Red Army by Erich Wollenberg, accessed 28 May 2010
  3. 15 January 1918 (Old Style)
  4. Hsiao-ting Lin, Modern China's Ethnic Frontiers: A Journey to the West, published 2010, p.58
  5. The names "Soviet–Finnish War 1939–1940" (রুশ: Советско-финская война 1939–1940) and "Soviet–Finland War 1939–1940" (রুশ: Советско-финляндская война 1939–1940) are often used in Russian historiography. See:
  6. "League of Nations' expulsion of the U.S.S.R."। League of Nations। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৩৯। সংগৃহীত ২৪ জুলাই ২০০৯ 
  7. Bullock (1993). p. 489.
  8. Glanz (1998). p. 58.
  9. ৯.০ ৯.১ Ries (1988)
  10. Norman Davies: "Since 75%–80% of all German losses were inflicted on the eastern front it follows that the efforts of the western allies accounted for only 20%–25%". Source: Sunday Times, 05/11/2006.