শনিবার, ২৬ ভাদ্র ১৪১৮; ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১; রাত ০৪:১৭

রামাদানে রোজা রাখা - ২

লিখেছেন মুসলিম৫৫ ০৮ অগাস্ট ২০১১, রাত ১১:৫২

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!

[এর আগের পর্বটা রয়েছে এখানে:
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/55688]

আমরা আগেই বলেছি যে,
রামাদানে রোজা রাখা – ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি।

আমরা আগের আলোচনার সূত্র ধরে, রামাদান সংক্রান্ত আমাদের আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে যাবো ইনশা’আল্লাহ্!

বাংলাদেশ সহ, প্রায় সকল মুসলিম দেশের শহর কেন্দ্রিক নাগরিক জীবনে রামাদান হচ্ছে কেনাকাটার, অপচয়ের এবং ভুরিভোজনের প্রতিযোগীতার মৌসুম – রাতকে দিন বানিয়ে, ব্যয়ের উৎসবে মেতে ওঠার মৌসুম। বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলো খুললেই আপনি দেখবেন যে, রামাদান সংক্রান্ত খবরগুলি হচ্ছে হয় নতুন জামাকাপড় ইত্যাদির বাজারের খবর অথবা চকবাজারের ইফতারীর সমারোহের চিত্র অথবা ইফতারীর না না রকম আইটেমের রেসিপি। কোন অমুসলিম বিদেশী, রামাদান সম্বন্ধে না জেনে থাকলে, ব্যাপারটাকে পশ্চিমা জগতের carnival-এর মত কিছু বলে ভুল করতে পারেন। বেশ কবছর ধরে, ঢাকায় বড় হওয়া এই আমার কাছেই রামাদানের সময়টাকে ”ইফতারী বিপ্লবের” বা “ভোজন বিপ্লবের” একটা সময় বলে মনে হয়। আমাদের দেশের এলিট তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আয়োজন করা ”ইফতার-পার্টি” এই ”বিপ্লবে” এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অথচ তাই কি হবার কথা ছিল – রামাদান মাসের কি আমাদের রসনা তথা ভোগ-বিলাসের স্পৃহাকে উসকে দেবার কথা ছিল? নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবসায়ীরা যে সারা বছর অতিরিক্ত মুনাফার জন্য এই সময়টার দিকে তাকিয়ে থাকে – তাই কি হবার কথা ছিল? আমরা যদি সত্যি “বিরত” থাকতে পারতাম, তবে কি তারা এ সময়টার ফায়দা লুটতে পারতো? তাছাড়া কথাতো ছিল আমরা কম খেয়ে, সংযত আচরণের মাধ্যমে যে সঞ্চয় বা সাশ্রয় করবো, তা থেকে বেশী বেশী দান-খয়রাত করবো – কিন্তু আমরা কি তাই করে থাকি? নীচের সংজ্ঞা ও বর্ণনাগুলো পড়তে পড়তে আসুন, আমরা তা ভেবে দেখি:

[রোজা বা] সিয়ামের অর্থ:

ভাষাগতভাবে “সিয়াম” অর্থ হচ্ছে কিছু থেকে বিরত থাকা যেমন – ধরুণ কথা বলা থেকে বিরত থাকা। শরীয়াহ্য় যখন “সিয়াম” বলা হয়, তখন সরাসরি খাদ্য, পানীয় ও যৌন সংসর্গ থেকে, রামাদান মাসের দিনগুলোর দিবাভাগে বিরত থাকাকে বোঝায়। এই কাজটি ইসলামের স্তম্ভগুলোর একটি – যেমনটা আমরা হাদীস জিবরীলে ["উম্মুল সুন্নাহ্" বলে পরিচিত মুসলিম শরীফের বিখ্যাত হাদীস - যেখানে জিবরীল (আ.) প্রশ্নের জবাবে রাসূল(সা.) ইসলামের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে "রামাদানে রোজা রাখাকে" ইসলামের একটি অবশ্যকরণীয় হিসেবে উল্লেখ করেন] দেখতে পাই।

সিয়ামের গুরুত্ব:

“সিয়াম” হচ্ছে আত্ম-সম্বরণ, পরহেজগারী ও “আল্লাহ্-সচেতনতা” অর্জনের একটা মাধ্যম। রাসূল (সা.)-এঁর আগের নবীদের বেলায়ও কোন না কোন আঙ্গিকে উপবাসের নিয়ম প্রযোজ্য ছিল। রামাদান মাসের রোজাকে ফরজ করে যে আয়াত নাযিল হয় – তাতে আল্লাহ্ রোজার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্দেশ করেছেন :

“হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য “সিয়াম” নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমনটা তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল – যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা বাক্বারা, ২ : ১৮৩)

রাসূল (সা.) বলেছেন যে, রোজা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবার ব্যাপারে একটা সুরক্ষা বুহ্য বা ঢাল :

“তোমরা যুদ্ধে যেমন ঢাল ব্যবহার কর, “সিয়াম” হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবার জন্য সেরকম একটা ঢাল।” (আহমাদ, নাসাঈ ও অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে – আলবানীর মতে সহীহ)।

উপরন্তু কিয়ামতের দিনে তা এক শাফায়াতকারী রূপে বা মধ্যস্থতাকারী রূপে কাজ করবে। রাসূল (সা.) বলেন,

“রোজা এবং কুর’আন পুনরুত্থান দিবসে মধ্যস্থতাকারী (বা সুপারিশকারী) হিসেবে আবির্ভূত হবে। রোজা বলবে, ‘হে প্রভু! আমি তাকে দিবাভাগে তার খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রেখেছিলাম। তাই (আজ) আমাকে তার পক্ষে সুপারিশ করতে দিন।’ পবিত্র কুর’আন বলবে, ‘আমি তাকে রাতে ঘুমানো থেকে বিরত রেখেছিলাম, সুতরাং আমাকে তার জন্য সুপারিশ করতে দিন।’ তখন তাদের সুপারশ করার অনুমতি দেয়া হবে।” (আহমাদ দ্বারা লিপিবদ্ধ – আলবানীর মতে সহীহ্)

“সিয়াম” হচ্ছে এমন একটা কাজ যা আল্লাহর প্রতি যে কারো বিশ্বস্ততাকে প্রতিফলিত করে। কেউ সত্যি “সিয়াম” পালন করলো কিনা বা রোজা রাখলো কিনা – তা একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন। সে গোপনে রোজা ভেঙে কিছু খেলো কিনা তা অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সেজন্য, যারা রোজা রাখেন, তাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। নিম্নলিখিত হাদীসে কুদসীতে তা বলা হয়েছে,

আল্লাহ্ বলেছেন, “সে তার খাবার, পানীয় ও বাসনা আমার জন্য ত্যাগ করেছে। ‘সিয়াম’ হচ্ছে আমার উদ্দেশ্যে এবং আমি তার প্রতিদান/পুরস্কার দেব এবং প্রতিটি সৎকাজের জন্য ১০ গুণ প্রতিদান দেয়া হবে।” (বুখারী)

আল্লাহর রহমতে ও করুণায়, একজন ব্যক্তি যদি আল্লাহর বিশ্বাস সমেত এবং প্রতিফল পাবার আশায় রামাদান মাসের রোজা রাখে, তাহলে আল্লাহ্ তার পূর্ববর্তী সব সগীরা গুনাহ মাফ করে দেবেন। রাসূল (সা.) বলেন :

“যে ঈমান সহকারে ও প্রতিফল পাবার আশা নিয়ে রামাদান মাস রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

[লেখাটা পুরানো এবং সম্পাদিত]

শেয়ার করুনঃ
৭১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
রেটিং +৫/-০
রেটিং দিতে লগইন করুন
পাঠকের মন্তব্য:
376537
০৯ অগাস্ট ২০১১; রাত ১২:১৭
যাররিনের বাবা লিখেছেন : আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।
সন্দেহ নেই ব্লগের রাজনৈতিক কিংবা প্রায় অর্থহীন অজস্র ইস্যু নিয়ে লেখায় জনপ্রিয় (মন্তব্যের বিচারে) হওয়া সহজ, কিন্তু সত্যিকার অর্থে একজন বিশ্বাসী মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে একধরণের খরা চলতে থাকে।

তা'ও ভালো উজিয়ে এসে গালাগাল দিয়ে ভরে দেয়া হয়না, এটুকু সহনশীলতাও অন্যত্র দূর্লভ!

ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ...
০৯ অগাস্ট ২০১১; দুপুর ০১:০৬
344118

মুসলিম৫৫ লিখেছেন : চেষ্টা করে যাওয়া - আমি শুধু ঐ টুকুই করতে পারি। নবী-রাসূলরাও কেবল ঐ টুকুই করতে পারতেন। বাকীটুকু absolutely আল্লাহর domain
378751
১০ অগাস্ট ২০১১; দুপুর ০১:০৪
মহুয়া হক লিখেছেন : ''রামাদানের সময়টাকে ইফতারী বিপ্লবের বা ভোজন বিপ্লবের একটা সময় বলে মনে হয়!'' ১০০% সত্যি!!
১১ অগাস্ট ২০১১; সকাল ১১:৩১
347151

মুসলিম৫৫ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
মন্তব্য লিখতে লগইন করুন
মুসলিম৫৫
আমার ভদ্রতাকে আমার দুর্বলতা ভেবো না যেন
 
লেখকের অন্যান্য লেখা