বীর মুক্তিযোদ্ধা

তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

| তারিখ: ২৩-১০-২০১২

  • ০ মন্তব্য
  • প্রিন্ট
  • Share on Facebook
আবদুল বাতেন খান, বীর প্রতীক

আবদুল বাতেন খান, বীর প্রতীক

৫৪৯
স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন।

আবদুল বাতেন খান, বীর প্রতীক
বীর যোদ্ধা
রাতে আবদুল বাতেন খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা নিঃশব্দে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করেন। তারপর ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে যান সামনে। তাঁদের লক্ষ্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি। রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানিদের মাইন ফিল্ডে পড়ে তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা আহত হন। এতে তিনি দমে যাননি বা মনোবল হারাননি।
সব বাধা উপেক্ষা করে আবদুল বাতেন খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীও প্রতিরোধ শুরু করে। গোলাগুলিতে রাতের আকাশ লাল হয়ে ওঠে। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। সকালে শত্রুসেনাদের ওপর তাঁরা বিপুল বিক্রমে চড়াও হন। তাঁদের বিক্রমে পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পেছন দিকে সরে যায়। নতুন স্থানে তারা অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে বিরাট এলাকা।
পরে পাকিস্তানি সেনারা নতুন শক্তি সঞ্চয় করে পাল্টা আক্রমণ চালায়। আবদুল বাতেন খানসহ মুক্তিযোদ্ধারা এমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুতই ছিলেন। সাহসিকতার সঙ্গে তাঁরা পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ মোকাবিলা করেন। পাকিস্তানিরা তাঁদের অবস্থানে ব্যাপক হারে গোলা ছোড়ে। বিস্ফোরিত গোলার ছোট-বড় স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা। কিন্তু তাঁরা দখল করা জায়গা থেকে সরে যাননি।
এ ঘটনা সালদা নদীতে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন সালদা নদী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। ১৯৭১ সালে সালদা এলাকায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পাকিস্তানিরা একপর্যায়ে সালদা রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘাঁটি তৈরি করে। রেলস্টেশন এলাকার চারদিকে ছিল মাইন ফিল্ড এবং পর্যবেক্ষণ পোস্ট।
মুক্তিযুদ্ধকালে সালদা এলাকায় অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েক দিন পরপর পাকিস্তানিদের আক্রমণ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি তাঁরা বড় ধরনের আক্রমণ চালান। চূড়ান্ত আক্রমণের আগে পাকিস্তানিদের সব প্রতিরক্ষায় মুক্তিবাহিনীর মুজিব ব্যাটারির কামান দিয়ে অসংখ্য গোলা ছোড়া হয়। এর ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষার বিশেষত কয়েকটি বাংকারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিভিন্ন স্থানে মাটির ওপরে ও নিচে ছিল পাকিস্তানিদের তিন স্তরের বাংকার।
সালদা নদী রেলস্টেশনের বাংকারগুলো ছিল রেলের বগি দিয়ে তৈরি। ওপরের স্তর যুদ্ধের জন্য। মধ্যম স্তর গোলাবারুদ রাখাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য। নিচের স্তর ছিল বিশ্রামের জন্য। মুক্তিবাহিনীর ছোড়া কামানের গোলায় দু-তিনটি বাংকার সম্পূর্ণ ধ্বংস ও কয়েকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোলার আঘাতে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও আহত হয়।
আবদুল বাতেন খান চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘এ’ (আলফা) কোম্পানিতে। রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্স নায়েক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি তাঁর ইউনিটের সঙ্গে শমশেরনগরে ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মেজর খালেদ মোশাররফের (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মৌলভীবাজার জেলার কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। পরে দুই নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। ধনদইল গ্রাম, নয়নপুরসহ বিভিন্ন স্থানের যুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আবদুল বাতেন খানকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১১০। গেজেটে তাঁর নাম আবদুল বাতেন।
আবদুল বাতেন খান স্বাধীনতার পর ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে হাবিলদার হিসেবে অবসর নেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার আড়াল (মিয়াবাড়ি) গ্রামে। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম সামসুদ্দিন খান, মা হাসুনি বেগম। স্ত্রী হেনা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে, দুই মেয়ে।
সূত্র: আবদুল বাতেন খান বীর প্রতীক, মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক, আমিনুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ২।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
ৎashedtৎ@pৎothom-alo.info

পাঠকের মন্তব্য

পাঠকদের নির্বাচিত মন্তব্য প্রতি সোমবার প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে।
আপনার মতামত দিন
old version
শুক্র
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ