অনেকদিন পর বৃষ্টিতে ভিজছি। মধ্যরাতে এমন নির্ভেজাল প্রাকৃতিক পরিবেশে এটাই আমার প্রথম বৃষ্টিস্নান। অনুভূতিটাকে মন্দ বলা যায় না। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটু আগে মিটিমিটি করে জ্বলতে থাকা জোনাকি গুলো বৃষ্টির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আকাশপথ ছেড়ে জলপথ ধরেছে। কেউকেউ আবার মনের...
‘মামী, আপনার বাচ্চাটা না অনেক কিউট হইছে! গুল্লু গুল্লু চেহারা!’ – কথাটা বলে ক্লিনিকের সফেদ বিছানায় শুয়ে থাকা মামীর দিকে আড় চোখে তাকালো অনল। মামী একমনে সিলিঙয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনলের প্রশংসা বাক্যে বিশেষ কোন ভাবান্তর হলো না মামীর মুখে। ঠোঁট দুটো মৃদু কেঁপে হালকা প্রসারিত হল মাত্র। মামীকে আরো...
সাইকেলের চাকা ঘুর ঘুর করে ঘোরে। সাইকেল এগিয়ে যায়। না, একটু ভুল বললাম। চাকা ঘুরলেই সাইকেল এগোয় না। সাইকেল এগোনোর জন্য চাই একটি বিশ্বস্থ তলের সংস্পর্শ, যে তলের উপর ভর করা যায়, যাকে আঁকড়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। এটাকে এক প্রকারের মিথোজীবিতা বলতে পারেন! তল ছাড়া যেমন চাকা অর্থহীন তেমনী তলের একাকীত্ব...
বৃষ্টি যেন বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার চেয়েও বড় কিছু হয়ে গেছে। আসি আসি করে বারবার ফাঁকি দিয়ে কোথায় যেন চলে যাচ্ছে। কষ্ট পাচ্ছে মানুষ, কষ্ট পাচ্ছে মাখলুক। সেদিন সন্ধ্যার পর রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। দেখি হাত দুয়েক দূরে দড়ির মত কি যেন একটা পড়ে আছে। একটু এগুতেই দড়িটা কিলবিল করে উঠলো! এক লাফে পাঁচ হাত পিছিয়ে...
মাথার উপরে চিঁ চিঁ করে শব্দ করে ধীর গতিতে পনের বছরের পুরনো ফ্যানটা ঘুরছে। পাঁচ বছরের মেয়ে লীনাকে নিয়ে ভরদুপুরে শুয়ে আছেন সানজিদা হোসেন। চাকুরীর ব্যস্ততায় মেয়েকে খুব একটা সময় দিতে পারেন না তিনি। তাই ছুটির দিনগুলোতে সে ঘাটতি খানিকটা পুষিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না এ ভদ্রমহিলা। মেয়েকে নিয়ে...
ঈদের দিনটা যেন কেমন কাটল রিদনের। কোন কিছুই যেন ঈদের মত করে হল না এবার। এমনকি ঈদের নামাজটাও তাড়াহুড়ো করে হল। এটা নাই, ওটা নাই, এটা আন, ওটা আন এসব নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ওকে। ঈদের দিনে কেউ বিয়ে করে? ওর আব্বুটা আসলে একটা পাগল!
না না, বিয়েটা রিদনের আব্বুর না, রিপার। রিপা রিদনের বড় বোন।...
মাওলানা জামিলুর রহমান ওরফে জামিল মাস্টার। জামিলুর রহমান কামিল পাশ করেছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের বছর দুয়েক আগে। মানে ১৯৮৮ সালের দিকে। পাশ করার পরপরই সদ্য প্রতিষ্ঠিত এক আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার চাকুরী পেয়ে যান তিনি। তখন থেকেই মাওলানা পদবীটি উহ্য হয়ে যায় জামিলুর রহমানের। জামিল মাস্টারের চার...
শাকেরা,
অনেকদিন থেকে তোমার সাথে কথা হয় না। চমকে গেলে? ভাবছো দু’দিন আগেই তো কথা হল! হ্যা হয়েছে, স্বীকার করছি। তবে তা অনেকদিন আগের মত করে না, কেমন যেন খসখসে, অনেকটা গুড়ো দুধের মত। সবি ঠিক আছে শুধু ময়েশ্চার কম থাকায় গলা দিয়ে নামতে একটু অসুবিধা হয়। চিঠিতে সে প্রব্লেমটা নেই। তাই...
চায়ের কাপটাতে দ্বিতীয়বারের মত চুমুক দেয় জিতু। চিনি ছাড়া চা। মানে লাল রঙয়ের গরম পানি! ভ্যাঁপসা গরমে গরম পানি খাওয়া কষ্টকর। তবুও জিতুকে পানিটা শেষ করতেই হবে। চিনি কম দিয়ে চা টা সেই দিতে বলেছে। এখন যেচে চিনি চাওয়াটাও প্রেস্টিজের ব্যাপার। বিশেষ করে জিমির সামনে। জিমি চিনি ছাড়া চা খায়। ডায়েবেটিস নাকি...
গত বিশ্বকাপের কথা। থাকতাম কাঁঠালবাগানের একটা হোস্টেলে। আমি এবং আমার মত অ্যাডমিশন প্রত্যাশী কিছু প্রীয় মুখ। দেশ যখন বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপাকাঁপি করত, আমরা তখন হোস্টেলের কলাপ্সিবল গেইটটাকে কাঁপাতাম। কারণ হোস্টেলে কোন টিভি ছিল না এবং রাতে কেয়ারটেকার চাচা গেইটে বড় একটা তালা ঝুলিয়ে রাখতেন। গেটটা...
গতকালের ঘটনা। কয়েকজন বন্ধু মিলে হাঁটছিলাম। পথে একটা জাম গাছ ছিল। এক বন্ধু বলল, গাছে থেকে নাকি টুপটাপ করে জাম পড়ে! জাম দেখতে উপরে তাকালাম। ব্যস! চোখের মধ্যে টুপ করে একটা জাম পড়ল! স্যরি! জাম না, ধুলো-বালি টাইপের কিছু হবে। চোখ বন্ধ করলাম। কিন্তু খুলতে পারলাম না। পানি দিলাম, চোখের পাপড়ি তুললাম।...
প্রীয়তমেষু,
সম্বোধন টা মনে হয় ঠিক হল না। তোমাকে এ নামে ডাকার দুঃসাহস আর সৌভাগ্যই বল কোনটাই আমার ছিল না, এখনও নেই। তবু ভুলেই ডেকে ফেললাম। জানই তো ভুল নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই। ভুল তো তুমিও করেছিলে একদিন। আমি কি মাতামাতি করেছি?
ভুলে গেছো? ভোলাটাই স্বাভাবিক। ভুলকুমারী বলে কথা!...
‘বাজি ধরো! বিয়েটা তোমার হবেই হবে!’ ফুল কনফিডেন্স নিয়ে বলেছিল আদিল।
মুফিয়ারও কনফিডেন্স কম ছিল না। ‘বাজি! বাজি! বাজি! কিছুতেই হবে না!’
মুফিয়া বাজিতে হেরে যায়। ছেলে পক্ষ একবার পিছিয়ে গেলেও পরে এগিয়ে আসে। মেয়ে পক্ষের অমত কখনই ছিল না। ফলে আদিলের জয় পেতে খুব একটা বাগ পেতে হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে...
বছর তিনেক আগে বড় শখ করে QWERTY কি-প্যাড ওয়ালা একটা মোবাইল কিনেছিলাম! কয়েকদিন যেতে না যেতেই Track Ball টা কাজে ইস্তফা দিল। ডানে যায়, বামে যায়, উপরেও উঠে কিন্তু নিচে নামে না! মহা মুসিবত! শখের মোবাইলটা বুঝি এবার যায়। সার্ভিসিং করলাম। ফিরে দু’দিন ঠিকভাবে কাজও করল। তারপর হঠাৎ একদিন হেডফোনের লাইনটা...
প্রথম দেখাটা কবে হয়েছিল মনে করতে পারছে না । তবে প্রথম ভালোলাগার কথাটা স্পষ্ট মনে আছে ওর। লম্বা ফর্সা এক যুবক পাপড়ির ছিট ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। যুবকের দৃষ্টি পাপড়ির মাথার উপর দিয়ে সোজা জানালার বাইরে! যুবক আনমনে কি যেন ভাবছে। পাপড়ি যে যুবকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই যুবকের। মুখ...
খামোখা পকেট ভারী করার দরকার কি? মোবাইলটা সাইলেন্ট করে ড্রয়ারে রাখে টিকু। ইদানিং এই যন্ত্রটার বিশেষ প্রয়োজন পরে না ওর। বেকার টিকুকে আন্তরিক হয়ে ফোন করার মত বাড়তি সময় মানুষের নেই। টিকুরও বা সময় কই? কে কেমন আছে না আছে সেটা জেনে টিকুর কি হবে?
আজকের বিকেলটা একটু অন্যরকম। অনেকক্ষণ থেকে দমকা বাতাস...
গত কয়েকদিন থেকে ইলেক্ট্রিসিটিটা খুব ডিস্টার্ব করছে। হঠাত হঠাত নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। অনেকদিন পর একটা শিট হাতে নিয়ে পড়তে বসেছিল পিয়াস। পিয়াসের মনের সাথে ইলেক্ট্রিসিটির বুঝি একটা গোপন সম্পর্ক আছে। পড়া শুরু করা মাত্রই দুম চলে গেল! মেহেদি একটা মোমবাতি জ্বালিয়েছে। আলোর চেয়ে কালো লাফাঙ্গা পোকায় ঘরটা ভরে...
একটা কালো কুচকুচে উকুনের মত পোকা রাহাতের পা বেয়ে উপরে উঠছে। পোকাটার নাম ছারপোকা। চুপচাপ রক্ত খায়। অন্যদিন হলে পোকাটাকে দু’আঙুল দিয়ে ধরে কলমের হেড দিয়ে টিপে মারত রাহাত। বিশ্রী একটা গন্ধ এসে নাকে বাঁধত ওর। গা গুলিয়ে উঠত। কিন্তু আজ পোকাটাকে বিন্দু মাত্র বাঁধা দিচ্ছে না সে। কতটুকুই আর খাবে বেচারী?...
ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!
পেশায় ছাত্র। পড়ছি ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে; বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এইতো