পৃথিবী নামক গ্রহটির যে অংশে স্রষ্টা আমাদের পাঠিয়েছেন, তা অনন্য। এ বিশ্বাস যেন জন্মগত ভাবেই অর্জিত সম্পদ। শুধুমাত্র বিশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থেকে এ এক ভালবাসায় রূপ নিয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। কেউ শেখায়নি এ ভালবাসার পদ্ধতি। প্রকৃতি যেন নিজেই এসে গেঁথে দিয়েছে মনের কোন এক গভীর অতলে একটি নাম- বাংলাদেশ। যতদিন মাটির গন্ধ শুঁকেছি ততদিন ভালো লেগেছিল এক তরফাভাবে। সীমানা পেরিয়ে যেদিনই কেউ বেরিয়ে এসেছে বিশ্বের প্রান্তরে, সেদিনই প্রথম ব্যথা অনুভব করেছে নিশ্চিত। সেদিনই বুঝেছে কি ছেড়ে এসেছে বহুদূরে। স্বদেশ নিয়ে এমন ভাবনাগুলো আজন্ম তবে ধীরে ধীরে গাঢ় হয়েছে বয়সের সাথে সাথে।

দেশটাকে নিয়ে অনেক গর্ব হৃদয়ের গভীরে। কি দারুন প্রাকৃতিক পরিবেশ! বীরত্বগাঁথা ঐতিহ্য! এখানে সম্পদ মাটির গভীরে, মাটির উপরে, এমনকি আকাশেও। শৈশব-কৈশরের দিনগুলোতে এমন ভাবনা ভেবেই বুঁদ হয়ে থাকতে ভালবাসে অনেকেই। যৌবনে এসে ধীরে ধীরে আমার মত হয়ত অনেকেই বুঝতে শুরু করেছে- পৃথিবীর সুন্দর স্থানগুলোতে যাদের বসবাস, তারা সবাই সুন্দর নয়। তাদের অসুন্দর মন, মানসিকতা, কর্মকাণ্ড বিষিয়ে তোলে তাদেরই প্রিয় আবাসভূমিকে। অন্যদিকে ভূমির বাসিন্দারাই যদি প্রকৃতির মতই তাদের দেশকে ভালবাসতে পারে, দেশের স্বার্থেই নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে পারে, তবে স্বর্গের সুখ তারা পৃথিবীতেই পেতে পারে। এসব ভাবনাকে আজকাল বড্ড নীতিবাক্য মনে হয়। নীতিবাক্যের উপমা এ জন্য যে, মানুষ যে বিষয়টি খুব বেশী বলে তাকেই সবচেয়ে বেশী পরিমাণে লঙ্ঘন করে থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উত্তাল অবস্থাকে কেউ আখ্যা দিচ্ছে ‘বসন্তের আগমন’ হিসেবে, কেউ আখ্যা দিচ্ছে- ‘আসন্ন গৃহযুদ্ধের পূর্বাভাষ’ হিসেবে। কিন্তু আমরা শংকিত দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে। কারণ, পরাধীন স্বর্গেও নরকের যন্ত্রণা রয়েছে- একথা এতদ অঞ্চলের মানুষের চেয়ে আর কে ভালো বুঝতে পারবে। দু’শো বছরের ইংরেজ-গোলামী, পাশাপাশি যুগে যুগে মীর জাফর আলীদের প্রেতাত্মার বারংবার আগমন আর টিপু সুলতান, সিরাজুদ্দৌলা, তীতুমীরদের আত্মদান; এসব ধারাবাহিকতারই এক পর্যায়ে এসে নানাভাবে আমরা নিজেদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছিলাম পাকিস্তান আমলে। তারপর অনেক ত্যাগ, অনেক দ্বিধা-দ্বন্ধ পেরিয়ে পেলাম স্বাধীনতা। যার সুরক্ষা নিয়ে আজো শংকিত কোটি কোটি বাংলাদেশী।

এদেশে লাল বসন্তের স্বপ্নবাজরা আড্ডাবাজদের মতই ক্ষণস্থায়ী। একথা অতীতে প্রমাণ হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে ইনশাআল্লাহ্। বর্তমানটুকু আপাততঃ পুলিশ প্রহরায় শাহবাগের জনচলাচল রোধ করে নিরাপদ। শাহবাগের লালপতাকার নিরাপদ আন্দোলন দেখে আমরা বিভ্রান্ত নই; বরং আমরা বিভ্রান্ত আমাদের দেশের বিবেক হিসেবে পরিচিত সংবাদ মাধ্যমগুলোর সীমারেখাহীন অধঃপতন দেখে। দেশের পরিস্থিতি যেখানে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে, সেখানে আমাদের মিডিয়া মাত্র ৫/৬ জন ব্যক্তির বিচারের দাবীতে সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছে। জ্বলজ্যান্ত সত্যগুলোকে সামনে রেখেই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে মিথ্যা সংবাদের মাধ্যমে। দেশের মানুষকে যদি মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা গাধা মনে থাকে, তবুও বলতে বাধ্য হবো যে, গাধারাও চোখে দেখে। কম বুঝলেও দু’চোখের আলোয় যে সত্যকে তারা দেখেছে বিগত কয়েক সপ্তাহে, শিয়ালের বুদ্ধিসম্পন্ন মিডিয়ার অনন্তকাল মিথ্যাচারেও তারা কোনদিন তা ভুলতে পারবে না। একদিন এসব সত্যই মিডিয়ার আধিক্য-শক্তিতে ভর করে আজকের মিথ্যাবাদীদের শুধু মুখোশ উন্মোচনই করবে না; বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। একজন অতি সাধারণ গাধা পর্যায়ের মানুষ হিসেবে এটাই আমাদের বিশ্বাস।