যেসব সিনেমা অসমাপ্ত রেখে গেছেন মহানায়ক মান্না
এক সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত নায়ক ছিলেন মহা নায়ক মান্না। চলচিত্রকে এমন ভাবে ভালবাসতেন যে তা বলার বাইরে। চলচিত্রকে ভালবেসে সারাক্ষন চলচিত্রের কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন। ঠিক মত পরিবারকেও সময় দিতে পারতেন না। চলচিত্র কে আপন ভেবে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। এজন্যই বাংলা চলচিত্রের মহানায়ক খ্যাতি পেয়েছেন দর্শকদের কাছ থেকে। ১৯৯৬ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শত শত ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী আকস্মিক ভাবে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে যায় দুনিয়া ছেড়ে। রেখে যায় তার হাজারো স্মৃতি। অসমাপ্ত রেখে যায় তার অনেক গুলো সিনেমা। নায়ক মান্নার অসমাপ্ত সিনেমা নিয়ে কিছু আলোচনা করব।
নায়ক মান্নার যেদিন মারা যায় সেদিন রাতে তিনি আহমেদ নাসির পরিচালিত “গরীবের ছেলে বড়লোকের মেয়ে” সিনেমার শুটিং স্পটে ছিলেন। ভালভাবেই সিনেমা করে রাত আড়াইটার দিকে বাসায় ফিরেছেন। সকালে বুকে ব্যথা উঠলে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে হসপিটালে যায়। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশে একটু টিটমেন্ট নিয়ে লন্ডন যাবেন ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু আর যাওয়া হয়নি, চলে গেছেন মরনের ডাকে না ফেরা দেশে। এরপরে “গরীবের ছেলে বড়লোকের মেয়ে” সিনেমাটি মারুফকে দিয়ে শেষ করা হয়।
নায়ক মান্নার অসমাপ্ত সিনেমার মধ্যে আরেকটি হল রকিবুল আলম রকিব পরিচলিত “চাকরের প্রেম”। ছোটপর্দার নায়িকা অহনার সাথে শুটিং এ অংশ নেন মহানায়ক। কিন্তু একটি মাত্র গানের শুটিং করেই মারা যান তিনি। চাকরের প্রেম সিনেমায় মান্নার গানটি রাখা হয়েছে। মান্নার অসমাপ্ত কাজ শেষ করেছেন আমিন খান। মান্না মারা যাওয়ার পর আমিন খান মান্নার চরিত্রে অভিনয় করে শেষ করেন সিনেমাটি। এইরকম আরো সিনেমার নাম,আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত “দরিয়া পাড়ের দৌলতী”, মনোয়ার খোকন পরিচালিত “পাওয়ার”, পি এ কাজল এর “বড়লোকের জামাই”, নিরঞ্জন বিশ্বাস এর “জীবন নিয়ে যুদ্ধ”। এসব সিনেমার সম্পূর্ণ কাজ নায়ক মান্না করে যেতে পারেন নি। বিভিন্ন উপায়ে শেষ করা হয়েছে এসব সিনেমা কাজ। দরিয়া পাড়ের দৌলতী সিনেমায় দেখা যায় শেষ অংশে মান্নাকে মেরে ফেলে। মেরে ফেলার দৃশ্যে নায়ক মান্নার বদলে অন্য একজন অভিনয় করেন। শেষের অংশ করে যেতে পারেন নি বলে শেষে মান্নাকে আর দেখানো হয়না। “পাওয়ার” সিনেমায় দেখা যায় একটা গানে নিপুন মান্না খুজে বেড়াচ্ছে কিন্তু ওখানে মান্নাকে দেখানো হয়না। মান্নার বদলে আরেকজন পিছন থেকে অভিনয় করে। এই সিনেমার সব শুটিং করলেও শেষের দিকের কাজ শেষ করে যেতে পারেন নি। এই সিনেমায়ও মান্নাকে মেরে ফেলা হয়। নায়িকার মাধ্যমে সিনেমা শেষ হয়। “বড়লোকের জামাই” এবং “জীবন নিয়ে যুদ্ধ” সিনেমার সম্পূর্ণ শুটিং করেই মান্না মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু ডাবিং করে যেতে পারেন নি। পরে চিত্রনায়ক অমিত হাসানকে দিয়ে দুটি ছবির ডাবিং শেষ করে মুক্তি দেওয়া হয় সিনেমা দুটি।
মহানায়ক মান্না ডজন খানেক সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে মারা যান। সবকটি সিনেমার জন্য অগ্রীম পারশ্রমিক নিয়েছেন। মৃত্যুর পর সেই টাকা প্রযোজকদের ফেরত দেওয়া হয়। মান্না তার নিজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কৃতাঞ্জলি থেকে তার নতুন সিনেমা “ডাক্তার মান্না” বের করতে চেয়েছিলেন। এতে মান্নার বিপরীতে অপু বিশ্বাস চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই মারা গেলেন নায়ক মান্না। বৃষ্টির চোখে আগুন নামে একটি সিনেমার অর্ধেক কাজ করেছিলেন। তার বিপরীতে ছিলেন পপি। সিনেমাটি অসমাপ্ত হিসাবেই আছে এখন। মহানায়ক মান্নার পূর্ণাঙ্গ শেষ সিনেমা এখনো মুক্তি মিছিল গুনছে। মুক্তি পাবে পাবে বলে মুক্তি পাচ্ছে না মান্নার শেষ ছবি “জীবন যন্ত্রনা”। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কাহিনী নিয়ে নির্মিত এ ছবির পুরো শূটিং শেষ হওয়ার কয়েক দিন পরই মারা যান মান্না। এই ছবিতে মান্নার বিপরীতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী এবং পপি। তারকা বহুল এই সিনেমা খুব শীগ্রই মুক্তি পাবে বলে জানা গেছে। জাহিদ হোসেন পরিচালিত নায়ক মান্নার শেষ ছবি “জীবন যন্ত্রণা” ছবিতে আরো দেখা যাবে বাপ্পারাজ,শাহনুর,আলী রাজ, মুক্তি, নাসিমা খান, শিশু শিল্পী দীঘী,মিশা সওদাগর, শহিদুল ইসলাম সাচ্চুসহ আরো অনেকে।