বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
আমাদের ৩ দফা দাওয়াত

 ভূমিকা
 আমাদের পরিচয়
 আমরা কেন দাওয়াত দিচ্ছি
 প্রথম দফা দাওয়াত
 দ্বিতীয় দফা দাওয়াত
 তৃতীয় দফা দাওয়াত
 আমাদের আহ্বান
 উপসংহার

* ভূমিকাঃ
ইসলাম মানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দুনিয়ায় এক পরিপূর্ণ নেয়ামত। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ মানবজাতিকে এই নেয়ামতের দিকেই আহ্বান করেছেন। কুরআন ও হাদীস থেকে জানা যায় যে, নবীগণ (আ.) মানুষকে এই বলে দাওয়াত দিয়েছিলেন:
يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ…[سورة الأعراف: 59]
“হে দেশবাসী, একমাত্র আল্লাহ্‌র দাসত্ব কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন হুকুমকর্তা (ইলাহ্‌) নেই।” (সূরা আল আ‘রাফ: ৫৯)
শেষ নবীর এ দাওয়াত যারা কবুল করেছেন তারা সবাই এ ঘোষণা দিয়ে ইসলামে প্রবেশ করেছেন :
لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌ “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নেই, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ্‌র রাসূল।”
কালেমা তাইয়্যেবার এই ঘোষণাকেই আমরা তিন দফা দাওয়াত আকারে আপনাদের সামনে পেশ করছি।

* আমাদের পরিচয়ঃ
আমরা কারা, কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাবো, কেন এসেছি এই পৃথিবীর পথে; ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর উত্তর না জানলে মানব জনম ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাই আমাদেরকে জানতে হবে যে, আমরা এই বিশ্ব বহ্মান্ডে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আমরা এসেছি ‘আলমে আরোয়াহ্ থেকে, আমাদের গন্তব্য জান্নাত শুধুমাত্র অবাধ্যরা ব্যতীত। এই পৃথিবীতে আমরা এসেছি মূলতঃ পরীক্ষা দিতে। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই এক মহান গুরুদায়িত্ব আমাদের সামনে পেশ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের মর্যাদাকে গগণচুম্বী উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। তা হচ্ছে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ বা প্রাণান্ত সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া। এই অসামান্য সুযোগ জিহাদের শুরুটা হয় মিষ্টি কথার মাধ্যমে এবং এর চূড়ান্ত পরিণতি হয় সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে। আজকে আমরা এখানে যে অবস্থানে রয়েছি, তা সেই বিশাল-বিরাট জিহাদের একেবারেই প্রারম্ভ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَآإِلَى ٱللَّـهِ وَعَمِلَ صَـٰلِحًا وَقَالَ إِنَّنِى مِنَٱلْمُسْلِمِينَ .
“তার কথা অপেক্ষা উত্তমকথা আর কার যেআল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম?” [সুরা ফুসিলাত (৪১:৩৩)]
মানবজাতির মধ্যে আমাদের আরেক মর্যাদাসম্পন্ন পরিচয় হল, আমরা মুসলমান, সর্বোত্তম উম্মত। আল্লাহ বলেন:
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْلِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَبِٱللَّـهِ
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভবঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।” [সূরা আলে ইমরান (৩:১১০)]
পৃথিবীতে কোটি কোটি মুসলমান বিদ্যমান অথচ সবাই আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে না। তাই এই বিশাল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও কিছু সংখ্যক লোকের মর্যাদা বৃদ্ধির সুযোগ আল্লাহ করে দিয়েছেন এভাবে:
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَىٱلْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ ۚ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম। [সূরা আলে ইমরান (৩:১০৪)]
সর্বোপরি সবকিছু যদি এই দুনিয়াতেই শেষ হতো, তবে কোন কথা ছিল না; বরং সবকিছুর ফলাফলের শুরুতো মূলতঃ আখেরাতে। আর আখেরাতেও আমরা মহান আল্লাহর দরবারিক আয়োজনে সাক্ষী দেব-
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَـٰكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا۟شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَٱلرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
“এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানব মন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রাসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।” [সুরা আল-বাক্বারাহ্ (২:১৪৩)]

* আমরা কেন দাওয়াত দিচ্ছিঃ
আল্লাহর প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা)কে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর পরিচয় যে, তিনি হচ্ছেন সার্বিক-
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ إِنَّآ أَرْسَلْنَـٰكَ شَـٰهِدًاوَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا – وَدَاعِيًا إِلَىٱللَّـهِ بِإِذْنِهِۦ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا
“হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়ক রূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ রূপে।” [সূরা আল-আহযাব (৩৩:৪৫-৪৬)]
অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে জানাচ্ছেন-
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّـهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
“তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব (৩৩:২১)]
সে শ্রেষ্ঠ রাসূল (সা) আমাদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন- بلّغوا عنّي ولو آية
“প্রচার কর আমার পক্ষ থেকে যদি একটি কথাও তোমার জানা থাকে।” [বুখারী]
আমরা অনেকেই ভাবছি হয়ত যে, আল্লাহ্ বলেছেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে গেছেন, না বললে কি আর এমন হবে? না! বরং যদি কেউ সত্য গোপন করে, সত্যকে সুস্পষ্টভাবে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে না দেয়, তাহলে তার ব্যাপারে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَتَمَ شَهَـٰدَةًعِندَهُۥ مِنَ ٱللَّـهِ
“তার চেয়ে বড় জালিম আর কে? যে তার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সাক্ষ্য রয়েছে তা গোপন করে?” [সূরা আল-বাক্বারাহ্ (২:১৪০)]

* প্রথম দফা দাওয়াতঃ
“দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি পেতে হলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ তা’আলাকে একমাত্র ইলাহ্‌ (হুকুমকর্তা) ও মুহাম্মাদকে (সা.) একমাত্র আদর্শ নেতা মেনে নিন।”
অর্থাৎ, আমরা সাধারণতঃ সকল মানুষেক বিশেষ ভাবে মুসলমানেদরেক আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করার আহবান জানাই।

* দ্বিতীয় দফা দাওয়াতঃ
আপনি যদি সত্যি তা মেনে নিয়ে থাকেন তাহলে আপনার বাস্তব জীবন থেকে ইসলামের বিপরীত চিন্ত্মা, কাজ ও অভ্যাস দূর করম্নন এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর বিরম্নদ্ধে কারো আনুগত্য না করার সিন্ধান্ত্ম নিন।
অর্থাৎ, বাস্তব জীবন থেকে মুনাফেকী ও কর্মবৈষম্য দূরীকরণ এবং মুসলমান হওয়ার দাবী করলে খাঁটি মুসলমান ও ইসলামের পূর্ণ আদর্শের অনুসারী হতে প্রস্তুত হন।

* তৃতীয় দফা দাওয়াতঃ
এ দুটো নীতি অনুযায়ী খাঁটি মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করতে চাইলে জামায়াতবদ্ধ হয়ে অসৎ লোকদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিন এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্ত্মরে ঈমানদার, আল্লাহভীরম্ন, সৎ ও যোগ্য লোকদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিন।
অর্থাৎ, অসৎ নেতৃত্বের পরিবর্তন করে তা আল্লাহর নেক বান্দাহদের হাতে সোপর্দ করা।

* আমাদের আহ্বানঃ
উপরোক্ত ৩ দফা দাওয়াত বাস্তবায়ন করতে হলে নিম্নের ৪ দফা বৈজ্ঞানিক কর্মসূচীতে কাজ করতে হবে-

১. দাওয়াতের মাধ্যমে চিন্তার পরিশুদ্ধি ও পুনর্গঠনের কাজ :
কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক শিক্ষাকে বলিষ্ঠ যুক্তির সাহায্যে তুলে ধরে জনগণের চিন্তার বিকাশ সাধন করতে হবে। মানুষের মধ্যে ইসলামকে অনুসরণ ও কায়েম করার উৎসাহ ও মনোভাব জাগ্রত করতে হবে।

২. সংগঠন ও প্রশিক্ষণের কাজ :
ইসলাম কায়েমের সংগ্রামে আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে সুসংগঠিত করে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

৩. সমাজ সংস্কার ও সেবার কাজ :
ইসলামী মূল্যবোধের ভিন্ডিতে সমাজের সংশোধন, নৈতিক পুনর্গঠন ও সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে জামায়াত সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন করছে।

৪. সরকার সংশোধনের কাজ :
জামায়াত শাসন ব্যবস্থার সকল স্ত্মরে অযোগ্য ও অসৎ নেতৃত্বের বদলে আল্লাহভীরম্ন, সত ও যোগ্য নেতৃত্ব কায়েমের জন্য গণতান্ত্রিক পন্থায় চেষ্টা চালাচ্ছে।

* ইসলামের বিজয়ের জন্য শর্ত:
সূরা আন্‌ নূরের ৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ যা বলেছেন, তার ভাবার্থ এরকম- আল্লাহ্‌ তা’আলা সরাসরি শক্তি প্রয়োগ করে ইসলাম কায়েম করেন না। আল্লাহ্‌র খিলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য যারা চেষ্টা করে আল্লাহ্‌ এ কাজে তাদেরকেই সাহায্য করেন। আল্লাহ্‌র যমীনে আল্লাহ্‌র দ্বীন কায়েম করার যোগ্য লোক তৈরি হলে তিনি তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেন।

* উপসংহারঃ
উত্তপ্ত এই পৃথিবীতে আর কত জ্বলতে থাকবো আমরা? আর কত জ্বলতে দেবো নির্যাতিত নিপীড়িতদের? না, আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতকে পৌঁছে দিতে হবে মানুষের কানে। আমরা নিশ্চিত যে, সফলতা আমাদের অনিবার্য। কারণ মুমিনের কোনদিন পরাজয় নেই।
নানা পথ, নানা মতের মাঝে থেকে আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে সত্যপন্থী দল। চলতে হবে তাদের সাথে এবং সংঘবদ্ধভাবে দুনিয়ার বুকে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পর্যায়ক্রমে বৈজ্ঞানিক কর্মসূচীর বাস্তবায়নের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তবেই আসবে সত্যিকারের বিজয়।
দুনিয়ার ব্যর্থতা আসল ব্যর্থতা নয়; বরং পরীক্ষা মাত্র। তাই দুনিয়ার উত্থান-পতনকে মূখ্য মনে না করে ঈমানের সাথে সাথে সৎকর্ম এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কতটা কী করতে পেরেছি, তার হিসাব নিকাষ করাই মূখ্য বিষয়।
আল্লাহ্ আমাদের তৌফিক দিন।

সংগ্রহে- ফজলে এলাহি মুজাহিদ

ডাউনলোড ওয়ার্ড ফাইল: amader 3 dofa dawat.