১৪ ডিসেম্বর ২০১৯  ঢাকা, বাংলাদেশ  
শেষ আপডেট এই মাত্র    
ADS

মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা ॥ একটি প্রামাণ্য দলিল

  • আনোয়ার কামাল

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের অহংকার। লাখো শহীদের রক্তে স্নাত মহান মুক্তিযুক্ত আমাদের চেতনার প্রতীক হয়ে আছে। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে যারা স্বীকার করেনি, যুদ্ধের নয় মাস সরাসরি আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যারা হত্যার নীল নকশা তৈরি করে যুদ্ধের সময়কালকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছে, সেই জামায়াত এবং তাদের মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’ সে সময় যে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারই প্রামাণ্য দলিল ‘দৈনিক সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা’ এই প্রামাণ্যগ্রন্থটি। লেখক গবেষক আলী আকবর টাবির এ গ্রন্থটি নিছক একটি গ্রন্থই নয়; এটি একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলাম সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, এ কথা কাগজে কলমে প্রমাণ করতে চাইলে সে সময়কার জামায়াতের মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’ এ প্রকাশিত রোজনামচা আকারে গোলাম আযমসহ জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বক্তব্য তাদের পত্রিকায় যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই এই গ্রন্থে যুদ্ধের দিনগুলোর ধারাবাবিকতায় তথ্য সমৃদ্ধ দালিলিক প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলাম আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য এমন কোন জঘন্য অপরাধ ছিল না, যা তারা করেনি। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’ এদেশের জনগণ ও বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়মাস অবাধ মিথ্যাচার ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ঘৃণ্য অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল।

প্রতিক্রিয়াশীল দৈনিকটি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ সকল প্রকার মানবতাবিরোধী কর্মকা- সমর্থন করে এসব অপকর্মকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সাফাই গেয়ে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জামায়াতে ইসলাম এবং এর অঙ্গ সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’র নেতৃত্বে গঠিত রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী স্বাধীনতাকামী নিরপরাধ সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে পত্রিকাটি এসব ঘাতক বাহিনীকে নিরপরাধ বাঙালী নিধনে প্ররোচিত করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে, বাঙালী জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যার কর্মপরিকল্পনার আভাসও ছিল তাদের ভাষ্যে। ১৯৭১-এ দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত (প্রতিবেদন, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ও পরিবেশিত সংবাদ) অসংখ্য বিষয় থেকে নির্বাচিত কিছু বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ গ্রন্থনা করা হয়েছে ‘দৈনিক সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা’ গ্রন্থটি।

গোলাম আযম, নিজামী ও মুজাহিদসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের যুদ্ধাপরাধের অনেক প্রামাণ্য তথ্যাদি দৈনিক সংগ্রামে পরিবেশিত সংবাদ ও প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। এই সমস্ত তথ্যাদি এই গ্রন্থে এক মলাটে আবদ্ধ করা হয়েছে। গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলায় এটর্নি জেনারেল মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক গোলাম আযমের অপকর্মের রেফারেন্স হিসেবে যে কয়টি বই উপস্থাপন করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে এই বইটি ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হলে অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা রেফারেন্স হিসেবে গ্রন্থটির ব্যবহার করে। ২০১৮ সালের বই মেলায় বইটির তৃতীয় সংস্করণ বেরিয়েছে। বইটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান একটি দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা, মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশিত ‘দৈনিক সংগ্রাম’ যে কেউ চাইলেও আর তা পাঠ করতে পারবে না। কিন্তু এ গ্রন্থটিতে প্রতিদিনের রোজনামচার মতো করে দিনপঞ্জি করে লেখা হয়েছে। যাতে প্রতিদিন জামায়াত নেতারা যেসব মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বক্তব্য দিয়েছিল তা লিপিবব্ধ করা আছে। এ ছাড়াও দুর্লভ কিছু ছবি যা প্রামাণ্য দলিল হিসেবে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষিত হয়ে থাকবে এ গ্রন্থটিতে। সংগ্রহে রাখার মতো গ্রন্থটি ২০১৮ সালের মেলায় তৃতীয় সংস্কৃরণ হিসেবে বের হয়েছে। আজকের প্রজন্মের কাছে এই বইটি পৌঁছে দেয়া অত্যন্ত জরুরী। ‘এবং মানুষ প্রকাশনী’ থেকে বেরুনো ২৫৫ পৃষ্ঠার এ বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা মাত্র। প্রচ্ছদ করেছেন রাজিব দত্ত। গ্রন্থটির রকমারী ডটকমের মাধ্যমে অনলাইলেও কেনা যাচ্ছে। অমূল্য প্রামাণ্য দলিলটির ব্যাপক প্রচার এবং পাঠকপ্রিয়তা প্রত্যাশা করছি।