জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা : ইলমে দ্বীনের সূতিকাগার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩৫:২৮ অপরাহ্ন
।। মাওলানা এহতেশামুল হক ক্বাসিমী ।।
সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের আলোর পথের দিশারী। আদর্শ জাতি ও সভ্য-সমাজ বিনির্মাণে খোদাপ্রদত্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা মাদরাসা শিক্ষার বিকল্প নেই। নশ্বর এ ধরায় যুগে যুগে যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর উত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কওমী মাদরাসা।
মক্কার সাফা পাহাড়ের অদূরে দারে আরকাম হলো দ্বীনি শিক্ষার উৎস কেন্দ্র প্রথম মাদরাসা। আর মদীনার মসজিদে নববীর আহলে সুফফার দরসগাহ হলো ইসলামের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক মাদরাসা। দ্বীনি জ্ঞানে পরিপূর্ণ প্রখ্যাত সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন এই মাদরাসারই ফসল। যার অমীয়সূধা পান করে তৃপ্ত হয়েছেন, ইবনে আব্বাস রা. ইবনে মাসউদ রা. আবু হুরাইরা রা.সহ সাহাবায়ে কেরামের নূরানী কাফেলা। সৃষ্টি হয়েছেন ইমাম আবু হানীফা রাহ., ইমাম মালিক রাহ., ইমাম শাফেয়ী রাহ., ইমাম আহমদ রাহ.সহ প্রমুখ আইম্মায়ে এযাম। যে কারখানা থেকে তৈরি হয়েছেন ইবনে সিনা, ইমাম গাজালীর মত দার্শনিক, আলেমে দ্বীন ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত। তারা একদিকে যেমন চারিত্রিক মাধুর্যতা দিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য সকলের নিকট ফুটিয়ে তোলে দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসারের কাজ আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। অপরদিকে সর্বপ্রকার ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা এবং বাতিলের মুখোশ উম্মোচন করার জন্য সর্বদা তারা ছিলেন সজাগ-সচেতন ও নিবেদিতপ্রাণ। ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য তারা জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম করে গেছেন। দারুল উলূম দেওবন্দ ও তার আদলে গড়ে উঠা কওমী মাদরাসাসমূহ মূলত সে ধারারই উত্তরাধিকারী একেকটি বিশ্বজয়ী প্রতিষ্ঠান।
এই দারুল উলুম দেওবন্দের পরিচয় দিতে গিয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের সম্মানিত সাবেক মুহতামিম হাকিমুল ইসলাম আল্লামা কারী তায়্যিব রাহ. বলেন- এ প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধর্মীয় দিক থেকে মুসলমান, আকীদাগত দিক থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, মাযহাবের দিক থেকে হানাফী, মাশরাবের দিক থেকে সূফী, দর্শনের দিক থেকে আশআরী ও মাতুরিদী, তরীকার দিক থেকে চিশতী ও নকশবন্দী, চিন্তাধারার দিক থেকে ওয়ালী উল্লাহী, মূলনীতির দিক থেকে কাসিমী, ফুরুআতের দিক থেকে রশীদী, সামগ্রিক দিক থেকে মাহমুদী, নিসবতের দিক থেকে দেওবন্দী। বস্তুতঃ এটাই কওমী মাদরাসার পূর্ণাঙ্গ পরিচয়।
আর এটা কোনো নতুন চিন্তাধারা বা মতবাদের নাম নয়; বরং সাহাবায়ে কেরামেরই মত ও পথ অনুসরণ ও সে পথে চলার শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রের নামই কওমী মাদরাসা।
এই কওমী মাদরাসার বৃহত্তম একটি শাখা হচ্ছে শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. এর বিশিষ্ট খলীফা মুফাসসিরে কোরআন বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা রাহ. এর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি দরসগাহ জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা সিলেট।
জামেয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য : ১. মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং সুন্নতে নববীর পদাঙ্ক অনুসরণ। ২. সাহাবায়ে কেরাম ও আইম্মায়ে দ্বীনের গবেষণাপ্রসূত জ্ঞানের আলোকে কুরআন-সুন্নাহর পরিপূর্ণ শিক্ষা প্রদান। ৩. আকাইদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও ফিকহে হানাফীর সংরক্ষণ এবং দেওবন্দী সিলসিলার তালীম ও তারবিয়্যাতের যথাযথ অনুশীলন। ৪. ইলমে দ্বীন হাসিলের সাথে সাথে নেক আমল ও আখলাকে নববীর আলোকে এমন একদল জিন্দাদিল আলেমেদ্বীন তৈরি করা, যাদের অন্তর তাকওয়া, ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতে থাকবে ভরপুর ও টইটুম্বুর। যাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হবে দ্বীনের প্রচার প্রসার ও তার যথাযথ সংরক্ষণ এবং সাধারণ মানুষকে সরল সঠিক পথের সন্ধান দিতে তারা সদা তৎপর থাকবেন। ৫. শিক্ষার্থীদের দেশ জাতি ও ধর্মের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ সুযোগ্য আলেম, বিজ্ঞ মুহাদ্দিস, প্রাজ্ঞ মুফাসসির, যোগ্য মুফতি, দক্ষ হাফেজ, মুহাক্কিক ওয়ায়েজ, বিদগ্ধ কলম সৈনিক, দরদী মোবাল্লিগ ও বীর মুজাহিদ রূপে গড়ে তোলা। ৬. আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহর সাথে সম্বন্ধ কায়েমের উদ্দেশ্যে তাযকিয়ায়ে নফস বা আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদান। ৭. যুগ চাহিদার প্রেক্ষাপটে কুরআন সুন্নাহর আলোকে নিত্যনতুন সমস্যার সমাধান উপস্থাপন। ৮. সমাজ থেকে শিরিক বেদ আতসহ সর্বপ্রকার রসম-রেওয়াজ ও কুসংস্কারের মূলোৎপাটন এবং বাতিলার মোকাবেলা করে সমাজে ইসলামের বিশুদ্ধ আক্বিদার বাস্তবায়ন।
উসূল ও মূলনীতি : জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা দারুল উলূম দেওবন্দের একটি শাখা বা প্রশাখা মাত্র। দারুল উলূম দেওবন্দ যে আট মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এখনো সেগুলোর উপর অটল অবিচল আছে, সেই আট মূলনীতিকে ফলো করেই জামেয়া রেঙ্গা তার সার্বিক পরিচালনা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং আগামী দিনেও এগুলোর উপর অটল অবিচল থেকে জামিয়া সম্মুখপানে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
জামেয়ার শিক্ষাকার্যক্রম : প্রতিবছর জামিয়ার শিক্ষা কার্যক্রম আরবী শাওয়াল মাসের প্রথম দশকের শেষ ভাগে শুরু হয়। ৯ বা ১০ শাওয়াল জামেয়ার নতুন একাডেমিক বছরের সূচনা হয়ে থাকে। প্রথম তিন দিন পুরাতন ছাত্র ভর্তি করা হয় আর নতুন ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের ভর্তির আবেদন ফরম জমা নেয়া হয়। শাওয়াল মাসের ১৫ কিংবা ১৬ তারিখে নতুন ছাত্রদের ভর্তি পরীক্ষা লিখিত ও মৌখিক উভয়ভাবে গ্রহণ করা হয়। এক দিন পর ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট আউট করা হয়। যারা ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে থাকেন তাদেরকে ভর্তি ফরম দেওয়া হয়। শাওয়ালের ১৮/১৯ তারিখ থেকে তারবিয়াতি মজলিস কায়েম করে নিয়মিত পাঠদান শুরু হয়।
শিক্ষা বিভাগ : জামেয়ার শিক্ষা প্রকল্প মোট সাতটি বিভাগে বিভক্ত। ১. নূরানী বিভাগ ২. ইবতেদাইয়া তথা মক্তব বিভাগ ৩. মুতাওয়াসসিতাহ নিম্নমাধ্যমিক বিভাগ ৪. সানাবিয়া বা উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ ৫. ফযীলত বা স্নাতক বিভাগ ৬. তাকমীল ফিল হাদিস বা মাস্টার্স ক্লাস। ৭. তাহফীযুল কুরআন ও নাযেরা বিভাগ।
পরীক্ষা পদ্ধতি : জামেয়ার শিক্ষা বিভাগের সকল স্তরে বছরে তিনটি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষা যা সাধারণত আরবী সফর মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রহণ করা হয়। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা যা আরবী জুমাদাল উলা মাসের প্রথম সপ্তাহে নেয়া হয়। বার্ষিক পরীক্ষা যা সাধারণত আরবী শাবান মাসে নেয়া হয়ে থাকে।
অন্যান্য বিভাগসমূহ :
কম্পিউটার বিভাগ : বর্তমান যুগ কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের যুগ। মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে এতদুভয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ইন্টারনেটের সুবাদে ঘরে বসে বসে আজ মানুষ দুনিয়ার হাল-হকিকত পর্যবেক্ষণ করছে। দুনিয়াটা যেনো এসে গেছে একদম হাতের মুঠোয়। এছাড়া জীবিকা অর্জনের মাধ্যম হিসেবেও এর গুরুত্ব কম নয়। এ দিকগুলো বিবেচনা করে জামেয়া বিগত এক দশক থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ বিভাগ চালু করে। এর জন্য জামেয়ায় একটি স্বতন্ত্র কম্পিউটার ল্যাব ও রয়েছে। বিজ্ঞ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে দশটি কম্পিউটারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত শতাধিক ছাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছেন।
কুতুবখানা বিভাগ : কুতুবখানা একটি আদর্শবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ বিভাগে গড়ে ওঠে জাতির আশান্বিত কান্ডারী। সভ্য ও সুশীল সমাজ বিনির্মাণে কুতুবখানার বিকল্প নেই। বর্তমানে জামেয়ার গ্রন্থাগারে কয়েক হাজার কিতাব ও বই-পুস্তক বিদ্যমান রয়েছে।
ফাতাওয়া বিভাগ : যেকোনো বিষয়ের ধর্মীয় সমাধানের নাম ফাত ওয়া। মানব জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কাজই হতে হবে ধর্মীয় সমাধানের আলোকে। এক্ষেত্রে ফাত ওয়ার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মুসলিম উম্মাহ দৈনন্দিন জীবনে ও প্রাত্যহিক বিষয়ে শরীয়ত মোতাবেক আমল করতে গিয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন, যেমন- বিয়ে, তালাক, লেনদেন, মিরাস বন্টন ও অন্যান্য মাসআলা মাসাইল, সেই সব সমস্যার সমাধান ও সেবা করার লক্ষ্যে জামেয়ার ফাতওয়া বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
ছাত্র পাঠাগার : বই-পুস্তক হচ্ছে ছাত্রদের মূল্যবান সম্পদ। জ্ঞানার্জনের প্রধান উৎস। জামেয়ার বিশাল কুতুবখানা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদের জন্য স্বতন্ত্রভাবে একটি পাঠাগার রয়েছে। দারসিয়াত ও ক্লাসিক্যাল পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ছাত্রদের বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে জামেয়া ‘ছাত্র পাঠাগার’ চালু করেছে।
সাহিত্য চর্চা : দক্ষ কলম সৈনিক ও আদর্শ লেখক গড়ে তোলার লক্ষ্যে সাহিত্য চর্চার জন্য নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে আরবী-বাংলা দেয়ালিকা ‘আল আরকান’। এছাড়াও বার্ষিক সাহিত্য সাময়িকী হিসেবে বাংলা ভাষায় ‘আল আরাকান’ ও আরবী ভাষায় ‘আল বাদরুল মুনীর’ এর প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।
মুনাযারা ও মুবাহাসা : সর্বপ্রকার ফিতনা-ফাসাদ ও বাতিল মতবাদের মুখোশ উন্মোচন এবং তার প্রমাণভিত্তিক দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবার মত ব্যক্তিত্ব তৈরি এবং ঘুমন্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে জামেয়ার বিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর তত্ত্বাবধানে ছাত্রদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের উপর বাহাস-মুবাহাসা ও বিতর্ক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
দারুল ইকামা (আবাসিক বোর্ডিং) : দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত ইলম পিপাসু ছাত্রদেরকে কলুষিত সমাজ ও পরিবেশ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে জামেয়ায় ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভর্তি ফরম অনুযায়ী বর্তমানে ৫৪৩ জন ছাত্র দারুল একামায় অবস্থান করছে।
উস্তাদ ও ছাত্রসংখ্যা : চলতি বছর ৪০ জন সুদক্ষ উস্তাদ জামেয়ায় পাঠদান করছেন। ১৩৫০ জন ছাত্র লেখাপড়া করছে। তন্মধ্যে ৫৪৩ জন ছাত্র আবাসিক আর বাকিরা অনাবাসিক। আবাসিক ছাত্রদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসা জামেয়া সরবরাহ করে থাকে। ৯জন কর্মচারী জামেয়ার বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন।
জামেয়ার ফাণ্ডসমূহ : জামেয়ার মোট পাঁচটি ফাণ্ড রয়েছে। ১. জেনারেল ফাণ্ড ২. গরীব ফাণ্ড ৩. বিল্ডিং ফাণ্ড ৪. কিতাব ফাণ্ড ৫. বৃত্তি ফাণ্ড। জেনারেল ফাণ্ড এর আয় থেকে আসাতিযায়ে কেরাম ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। নির্মাণ খাতে বিল্ডিং ফাণ্ডের টাকা-পয়সা এবং দরিদ্র ছাত্রদের অন্ন ও চিকিৎসা খাতে গরীব ফাণ্ডের অর্থ খরচ করা হয়। কিতাব ফাণ্ড থেকে গরীব ছাত্রদের জন্য কিতাবাদি সরবরাহ করা হয়। আর বৃত্তিফাণ্ডের আয় থেকে মেধাবী ছাত্রদের মেধানুসারে বৃত্তি প্রদান করা হয়।
তাওয়াক্কুলিয়া ফুযালা ও আবনা পরিষদ : এ সংগঠনটি জামেয়ার ফুযালা, আবনা ও হাফিযদের নিয়ে গঠিত। যারা দাওরায়ে হাদীসে উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদেরকে জামেয়ার ফুযালা, যারা দাওরায়ে হাদীস খোলার পূর্বে জামিয়ায় লেখাপড়া করেছেন অথবা দাওরায়ে হাদীস ছাড়া অন্য কোন জামাতে পড়েছেন তাদেরকে আবনা এবং যারা তাহফীযুল কুরআন বিভাগ সম্পন্ন করেছেন তাদেরকে হুফফায বলা হয়। জামেয়ার সন্তানদের যুগ সচেতন করে গড়ে তুলতে এবং উদ্ভূত বাতিল সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে ও দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে প্রয়োজন যথাসময়ে আসাতিযায়ে কেরামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার।
যে দিকনির্দেশনা হবে তাদের জীবন পথের পাথেয়। অসত্য ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে আশা জাগানিয়া মন্ত্র। এসব দিক বিবেচনা করে এবং জামেয়ার সন্তান হিসেবে পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে অক্ষুন্ন রাখতে জামেয়া কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ২০১৭ ইংরেজি সনে গঠিত হয় ‘তাওয়াক্কুলিয়া ফুযালা ও আবনা পরিষদ’ নামক একটি সংগঠন। যার কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত আছেন জামেয়ার সরপরস্ত হযরত মাওলানা শামসুল ইসলাম খলিল দা.বা। নির্বাহী সভাপতি হিসেবে জামিয়ার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত মনোনীত হয়েছেন হযরত মাওলানা নুরুল ইসলাম সুফিয়ান। কেন্দ্রীয় কমিটির আদলে বৃহত্তর সিলেটের প্রত্যেক জেলা উপজেলা ও থানাওয়ারী কমিটি গঠন করা হয়। জামেয়ার ফুযালা ও আবনার ঘামঝরা মেহনতের ফসল শতবার্ষিকী ও তিন দিনব্যাপী দস্তারবন্দী মহা সম্মেলন।
জামেয়ার অবদান : জামেয়ার বয়স আজ ১০০ বছর। একে একে দশটি দশক পাড়ি দিয়ে জামেয়ার তরী আজ শতকের তীরে নোঙ্গর করেছে। এরই মধ্যে জামেয়া কতইনা খেদমত আঞ্জাম দিয়েছে, কতইনা ব্যক্তিত্ব গঠন করেছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
১৩৮৮ হিজরী থেকে শুরু করে ১৪৪১ হিজরী পর্যন্ত ২৬৯৮ জন আলেম জন্ম দান করেছে। আর ১৩৯০ হিজরী থেকে শুরু করে ১৪৪১ হিজরী পর্যন্ত ৭৮৯ জন ছাত্র হিফযুল কুরআন সম্পন্ন করেছে। এসব আলেম-উলামা ও হাফেজে কুরআন জামেয়া থেকে ফারেগ হয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে ইসলামের বহুমুখী খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। সূচনালগ্ন থেকেই জামেয়া রেঙ্গা অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সম্মানজনক স্থান লাভ করে আসছে। ফলাফলের দিক থেকে জামেয়া আজ সবার শীর্ষে অবস্থান করছে।
জামেয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা : জামেয়ার বেশকিছু ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে। দ্বীনি শিক্ষার উচ্চতর কয়েকটি শাখা ধারাবাহিকভাবে অচিরেই বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ১. দারুল ইফতা ২. তাখাসসুস ফী উলূমিল হাদীস ৩. তাখাসসুস ফী উলূমিল কুরআন ৪ তাখাসসুস ফিল আদাবিল আরাবী ৫. কিসমুল কিরাআহ ও তাজবীদ ইত্যাদি।
জামেয়ায় এই শাখাগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে আলাদা আলাদা কয়েকটি ভবনের দরকার। বেশকিছু কিতাব ও গ্রন্থের প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট আসবাব ও সামগ্রীর জরুরত। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের মদদ, নুসরত ও তাওফীক এবং দীনদরদী মুসলমান ভাই-বোনদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এগুলোর বাস্তবায়ন তেমন কোনো কঠিন ব্যাপার নয়।
লেখক : সহকারী শায়খুল হাদীস, জামিয়া দারুল কুরআন সিলেট