পানামা পেপার্সে আ’লীগারদের নাম
পানামা পেপার্সে আ’লীগারদের নাম
Published : Thursday, 7 April, 2016 at 12:00 AM, Update: 06.04.2016 10:28:39 PM
টাকা পাচারের তালিকায় প্রেসিডিয়াম সদস্য, আ’লীগের ব্যবসায়ী শিল্পপতিসহ ২৫ জনদিনকাল রিপোর্টবিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ক্রাইম অব দি সেঞ্চুরি পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে এবার দেশের কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, তার স্ত্রী নিলুফার জাফর এমপি, তার পরিবার, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান পরিবারসহ বাংলাদেশি ২৫ ক্ষমতাসীন ব্যক্তির নাম বেরিয়ে এসেছে। তারা বিভিন্ন অফসোর কোম্পানির নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন বলে বলা হয়েছে পানামা পেপারসে। পানামা পেপারসে যে সব সাবেক ও বর্তমান রাষ্ট্রনেতা, ধনকুবের, সেলিব্রেটি, খেলোয়াড় ও মাদক ব্যবসায়ীর সম্পদ গোপনের বিষয়টি জানা গেছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে নানা পদপে নেয়া শুরু করলেও বাংলাদেশিদের বিষয়ে এখনো সরকার নীরব। ‘পানামা পেপারস’ নামে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ওসব নথি প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। ওই তালিকায় বিশ্বের বাঘা বাঘা রাষ্ট্রপ্রধানসহ শতাধিক মতাধর ব্যক্তি ও আত্মীয়স্বজনের কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রমাণ রয়েছে। জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতংয়ের অনুসন্ধানী সাংবাদিক বাস্তিয়ান ওবারমেয়ারের হাতে এসব নথি আসে। তারা এটাকে তুলে দেন আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক সংস্থা আইসিআইজের কাছে। পরবর্তীকালে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান, ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বাংলাদেশের নিউএইজসহ ৭৮টি দেশের ১০৭টি সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে। সোমবার ১ কোটি ১৫ লাখ নথি প্রকাশ করা হয়। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, গার্ডিয়ান ও আইরিশ টাইমসের। :  মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া নথিগুলো বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। নথিতে বিশ্বের শতাধিক মতাধর মানুষ বা তাদের নিকটাত্মীয়দের বিদেশে টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তালিকায় দেখা গেছে যে, চীন, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ, সৌদি আরবের মতো মতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বা তাদের আত্মীয়, খেলোয়াড়, অভিনেতাসহ ধনী ও মতাধর ব্যক্তিরা এসব অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। প্রথম দফায় তালিকা প্রকাশ করার পর মে মাসে দ্বিতীয় কিস্তি নথি প্রকাশের কথা রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে এ তালিকায় যাদের নাম উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, তার স্ত্রী নিলুফার জাফর এমপি ও তার পরিবার। বলা হয়েছে, তারা ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অফসোর কোম্পানির মালিক। তবে এ ছাড়া ওই তালিকায় রয়েছে সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড মার্কেন্টাইল করপোরেশন প্রাইভেটের চেয়ারম্যান ও ৫ জন ডাইরেক্টর অফসোর কোম্পানির মালিকানায় রয়েছেন। তারা একই পরিবারের সদস্য। তারা হলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান আজিজ খান, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, তাদের কন্যা আয়েশা আজিজ খান, চেয়ারম্যানের ভাই জাফর উমেদ খান, আজিজ খানের ভাজিতা মো. ফয়সল করিম খান। এর মধ্যে জাফর উমেদ খান ও মো. ফয়সাল করিম খান বাদে তারা ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের কোম্পানি নিবন্ধন করিয়েছেন সিঙ্গাপুরের ঠিকানায়। এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশি বিজনেসমেনস লিঙ্ক টু অফসোর কোম্পানিজ রিভিলড’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকার একটি পত্রিকা। আইসিআইজের সঙ্গে যৌথভাবে পানামা পেপারস বিশ্লেষণ করে এ পত্রিকাটি। তারই ভিত্তিতে ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। : এতে বলা হয়, অন্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এেেত্র অনেকদূর এগিয়ে যায় সামিট গ্রুপ পরিবারের ডাইরেক্টররা। তারা অফসোর কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা নিতে নিজেদেরকে ডাইরেক্টর বা শেয়ারহোল্ডার দেখানোর চেয়ে নমিনি হিসেবে দেখিয়েছে। ওই তালিকায় আরও নাম আছে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর, যারা ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অফসোর কোম্পানির মালিক। এর মধ্যে আছেন ইউনাইটেড গ্রুপের হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মইনুল আহসান (শামীম), আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আখতার মাহমুদ। এতে নাম আছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এ এমএম খানের। ওই তালিকায় নাম আছে মোমিন টির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল মইন, পাট ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার মোদির। তারা দুজনেই ২০০৫ সালের মার্চে রাইটস্টার প্রাইভেটের পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হন। সি পার্ল লাইন্সের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সিরাজুল হকের নামও আছে এতে। বলা হয়েছে, তিনি সভারিন ক্যাপিটল প্রাইভেটের ডাইরেক্টর বা শেয়ারহোল্ডার। এটা নিবন্ধিত হয়েছে ২০১০ সালে। ওই তালিকায় নাম আছে বাংলা ট্রাক লিমিটেডের মো. আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক ও তারিক একরামুল হকের। এ ছাড়া নাম আছে ওস্টোর্ন মেরিনের পরিচালক সোহেল হাসানের। নাম আছে মাসকট গ্রুপের চেয়ারম্যান এফএম জুবাইদুল হকের। বলা হয়েছে, তিনি তার স্ত্রী সালমাসহ অফসোর কোম্পানি স্প্রিয় শোর ইন্টারন্যাশনালের ডাইরেক্টর/শেয়ারহোল্ডার হন ২০০৭ সালের মে মাসে। এ তালিকায় আরও নাম আছে সেতু করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাবুদ্দিন চৌধুরীর। স্ত্রী উম্মেহর সঙ্গে তিনি ২০০৭ সালের আগস্টে তালাভেরা ওয়াল্ডওয়াইডের ডাইরেক্টর/শেয়ারহোল্ডার হন। স্কাপর্ক লিমিটেড এবং অমনিকেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুল আলমের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। রয়েছে তার পুত্রবধূ ফওজিয়া নাজের নাম। বলা হয়েছে, তারা সিটিলিঙ্কের মালিক। তারা ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে পাউমি টেকনোলজি লিমিটের ডাইরেক্টর/শেয়ারহোল্ডার হন। আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপ- ব্যবস্থাপনা পরিচালক আএসএম মহিউদ্দিন আহমেদ, তার স্ত্রী আসমা মোনেনের নাম রয়েছে এতে। বলা হয়েছে, তারা ২০০৮ সালের জুনে অফসোর কোম্পানি ম্যাগনিফিসেন্ট ম্যাগনিটিউডের ডাইরেক্টর/শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন। এতে আরও নাম রয়েছে অনন্ত গ্রুপের শরিফ জাহিরের। বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সিপিএটি (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেডের ডাইরেক্টর হয়েছেন। উইকিলিকসের টুইটার অ্যাকাউন্টে ওই লিংকটি মঙ্গলবার শেয়ার করা হয়েছে। : পানামা কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বব্যাপী এনিয়ে তদন্ত চলছে। পানামার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া চাঞ্চল্যকর গোপন নথির বিষয়টি তদন্ত করবে দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটর অফিস। পানামার প্রসিকিউটর অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘পানামা পেপারস’ নামে খ্যাত প্রতিবেদনে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তার ফৌজদারি তদন্ত করা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ জানিয়েছে, তারাও এ ধরনের কিছু করার কথা ভাবছে। এরই মধ্যে পানামা পেপারসের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর দেশটির হাজার হাজার মানুষের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন। : এদিকে সম্পদ গোপনে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ৮০০ জন সম্পদশালী গ্রাহকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। সংশ্লিষ্ট এক সূত্রমতে জানা গেছে, মোসাক ফনসেকার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার-বিষয়ক তদন্ত শুরু করেছে স্পেন। অন্যদিকে পানামার প থেকেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করতে তদন্ত পরিচালনা করবে তারা। সেেেত্র কোনো ধরনের আর্থিক য়তির  েেত্র তিপূরণ দেয়া হবে। পানামার প্রেসিডেন্ট কার্লোস ভারেলা বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদন্তে পানামা অবশ্যই সহায়তা করবে তবে নিজ দেশের সুনাম রার েেত্রও সজাগ থাকবে তারা। : তবে পাচার করা বাংলাদেশের সরকারি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, এমপি ও সাবেক মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যসহ ক্ষমতাসীনদের নাম প্রকাশ হলেও এ বিষয়ে তদন্ত এখনো সরাকারের কোনো সংস্থা থেকেই কিছুই বলা হয়নি। : : :





প্রথম পাতা'র আরও খবর
অনলাইন জরিপ

পানামা পেপার্সে আ’লীগারদের নাম আসায় কি প্রমাণিত হয় যে, দলটির নেতারা দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন?
 হ্যাঁ   না   মন্তব্য নেই
দিনকাল ই-পেপার
পুরনো সংখ্যা
আজকের মোট পাঠক
12076 জন