indus valley civilization ||Indus Valley Civilisation: Origin, Evolution and Characteristics || সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য

indus valley civilization :-সুপ্রাচীনকাল থেকে মানব সমাজের অগ্রগতির সাথে সাথে গড়ে উঠেছে নানা সভ্যতা। হয়েছে সভ্যতার অগ্রগতি, বিস্তার ও পতন ।ভারতবর্ষকে যে পৃথিবীর সুপ্রাচীন উন্নতি সভ্যতার কেন্দ্র ছিল হরপ্পা তার প্রামানিক দলিল। এই সভ্যতা আবিষ্কারের পূর্বে সকলের ধারণা ছিল যে এদেশে আর্যদের আগমনে পরেই তার সভ্যতা ও সংস্কৃতির সূচনা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণার সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে এবং সকলেই বিশ্বাস করেন যে অনন্ত আজ থেকে 5000 বছর পূর্বে ভারতীয় সভ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করে। অর্থাৎ এই সভ্যতা মিশর, ব্যাবিলন অ্যাসীরিয় সভ্যতার সমসাময়িক।

indus valley civilization  :-আবিষ্কার-

1875 সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম উত্তর-পূর্ব ভারতের অজ্ঞাত পরিচয় এবং অপরিচিত লিপি সম্মনিত একটি শিলমোহরের সন্ধান পান ।কিন্তু এই শীলমোহরের পাঠোদ্বার করা যায়নি ।পরে 1921 – 24 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ,এবং দয়ারাম সাহানি ,পশ্চিম পাঞ্জাবে অন্তর্গত সুলতান জেলার হরপ্পা এবং সিন্ধু দেশের অন্তর্গত লারকানা জেলার মহেঞ্জোদারো প্রাচীন যুগের ধ্বংসাবশেষ সন্ধান পান। এছাড়া কাশীনাথ দীক্ষিত ননীগোপাল মজুমদার , স্যার মাটির লুথার ব্যক্তির নাম জড়িয়ে আছে।
সিন্ধু নদের তীরে প্রথম সভ্যতা আবিষ্কৃত হয় বলে পূর্বে এই সভ্যতা সিন্ধুসভ্যতা বলা হয়। সাম্প্রতিক সিন্ধুতট অতিক্রম করে ভারত ও ভারতের বাইরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সভ্যতার প্রায় 250টি কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তাছাড়া মহেঞ্জোদারো তুলনায় হরপ্পা অনেক প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে এবং মহেঞ্জোদারো অপেক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।এসব কারণে প্রত্নতত্ত্ববিদ এদের কাছে এই সভ্যতা ‘হরপ্পা সভ্যতা’ নামে পরিচিত।

indus valley civilization :-নগর পরিকল্পনা-

হরপ্পা সংস্কৃতির উৎপত্তি যেভাবেই হোক না কেন তার বিস্তার কম বা বেশী যাই হোক না কেন সিন্ধু অঞ্চলের বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে এই সভ্যতার এই সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ হরপ্পা সভ্যতা সংস্কৃতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ।ঐতিহাসিক লুথার মনে করেন যে ,মহেঞ্জোদারো নাগরি পতনের সময় নগরীর পরিকল্পনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায় অতিক্রম করে উন্নতির চরমসীমায় উপনীত হয়েছিল ।এবং মহেঞ্জোদারো হরপ্পা তার নিদর্শন পাওয়া যায়।

মহেঞ্জোদারো শহরটির পশ্চিম দিকে প্রায় 40 ফুট উঁচু একটি বিশাল আয়তন ঢিপির ওপর দুর্গ ছিল। এই দুর্গ অঞ্চলে কিছু ঘরবাড়ি ও ছিল মনে হয় সেগুলি শাসকদের বাসস্থান ছিল ।দুর্গ অঞ্চলে সর্বসাধারণ ব্যবহারের উপযোগী একটি বিশাল বাঁধানো স্নানাগার অবস্থিত ছিল ।তার আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য 180 ফুট এবং প্রস্থ108 ফুট ।এর চারিদিকে ঘিরে আছে 8 ফুট উঁচু ইটের দেওয়াল, কেন্দ্রস্থলে আছে একটি জলাশয় 39 ফুট লম্বা এবং 23 ফুট চওড়া এবং 8 ফুট গভীর জলাশয় এর নোংরা জলনিকাশি ও তাতে পরিষ্কার জলপূর্ণ হওয়ার ব্যবস্থা ছিল ।ঋতুভেদে জল গরম বা ঠান্ডা করার ব্যবস্থা ছিল।

এই পাশেই ছিল কেন্দ্রীয় শস্যাগার এর আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য200 ফুট প্রস্থে 150 ফুট এ .এল.ব্যাসাম এটিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরই পাশাপাশি স্যার হুইলার বলেছেন যে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের পূর্বে এ ধরনের বিশাল আয়তনের শস্যাগার পৃথিবীতে কোথাও পাওয়া যায়নি ।এই অঞ্চলে অন্যান্য বাড়ির ধ্বংসাবশেষ কে পণ্ডিতরা সভাকক্ষ ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমিতি বলে চিহ্নিত করেছেন।
দুর্গ অঞ্চলের উঁচু ঢিবির পূর্ব দিকে নিচু জমিতে মূল শহরটি গড়ে উঠেছে। নগরের উত্তর দক্ষিণ এবং পূর্ব পশ্চিম দিকে সমন্তরাল কয়েকটি রাস্তা চলে গেছে ।রাস্তাগুলি থেকে 9 থেকে 30 ফুট চওড়া ,এই রাস্তাগুলি থেকে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য গলি ,গলি গুলোর দুপাশে নাগরিকদের ঘরবাড়ি, ঘরবাড়িগুলো ছিলো পোড়ামাটির তৈরি এবং অনেক বাড়িই ছিল দোতলা,বা তিনতলা। প্রত্যেক বাড়িতে প্রশস্ত উঠোন, স্থানাগার কুয়ো এবং নর্দমার ব্যবস্থা ছিল ।অনেক বাড়িতে আবার সোকপিঠ ছিল রাত্রির নোংরা জল নর্দমা দিয়ে এসে রাস্তায় ঢাকা দেওয়া বাঁধানো নর্দমায় পড়তো। নর্দমাগুলি পরিষ্কারের জন্য ম্যানহলের ব্যবস্থা ছিল প্রসঙ্গে বলেন ড: এ. এল.ব্যাসাম বলেন যে সভ্যতার পূর্বে অপর কোন প্রাচীন সভ্যতার পরিণত ব্যবস্থা ছিল না। প্রত্যেক বাড়ির সামনে বাঁধানো ডাসবিন ছিল। কেবল মাত্র বড় রাস্তার ওপরে শহরের দোকানগুলি অবস্থিত ছিল ।শহরের উত্তর-পূর্ব কোন সারিবদ্ধ ভাবে ছোট ছোট কুঠরী ঘর ছিল মনে করা হয় ।এগুলি দরিদ্র ও শ্রমজীবি মানুষের বাসস্থান ছিল। অধ্যাপক গর্ভন চাইল্ড বলেছেন যে ,হরপ্পার পৌরশাসক বা গৃহ নির্মাণ সংক্রান্ত আইন মেনে চলতে।

indus valley civilization:- খাদ্য –

সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলে সম্ভবত পোট্টোঅস্ট্রোলয়েড ,অলপিনিয়ড, মেডিটারিয়ান এবং মঙ্গলয়েড এই চার জাতির মানুষ বাস করত। এই সভ্যতার নগর কেন্দ্রিক হলেও এদের প্রধান বা মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ।কারণ এই সভ্যতা নদী মাতৃক। তবে একথা বলা যায় যে খাদ্যাভাস ছিল এখানকার অধিবাসীরা গম, যব ,বার্লি, বাদাম, ধান, খেজুর রায় মোটর ফলমূল দুধ মুরগি ও পশুর মাংস এবং মাছ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতো সিন্ধু উপত্যকার প্রচুর এবং বাইরে থেকেও নদীপথে খাদ্যশস্য আমদানি করা হতো নিয়মিত মাংস সরবরাহের জন্য তারা নানারকম জীবজন্তুর পালন করত ধ্বংসপ্রাপ্ত কোদাল এবং নানা রকম খেলায় মাটি থেকে সিন্ধু উপত্যকার গৃহপালিত জীব জন্তুর কথা জানা যায়।

indus valley civilization :-পোশাক পরিচ্ছদ-

সিন্ধু উপত্যকা আদিবাসীরা কিরূপ পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করত তা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কোন নিদর্শন না পাওয়া গেল সেখানকার প্রাপ্ত মূর্তিগুলো থেকে যে সম্পর্কে ধারণা করা যায় ।সিন্ধু বাসি সুতি ও পশমের বস্ত্র ব্যবহার করত ।তারা দেহের উর্ধাংশ ও নিম্নাংশ বস্তু দ্বারা আবৃত করত। নারী-পুরুষ উভয়ের লম্বা চুল ছিল। মেয়েরা সোনা রুপার ফিতে দিয়ে নানান ধরনের খোঁপা করত। তারা নানা ধরনের সুগন্ধি প্রসাধনী সামগ্রী এবং পাথরের তৈরি নানা ধরনের ও নানা আকারের কানের দুল চুড়ি,মল, কোমরবন্ধুক ও মালা ব্যবহার করত।

indus valley civilization :-ব্যবসা-বাণিজ্য-

ভারত ও ভারতের বাইরে নানাস্থানের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল ।দাক্ষিণাত্যের থেকে দামি পাথর রাজপুতানা থেকে তামা, কাথিয়ারার থেকে সঙ্খ। বেলুবিস্তান ও আফগানিস্তান ও ইরান থেকে সোনারুপা ,সিসা,টিন,আমদানি হত। সিন্ধু উপত্যকা থেকে রপ্তানি হত। তুলা, সুতিবস্ত্র, তামা, হাতির দাঁত, হাতির তৈরি নানা জিনিসপত্র, সুতির বস্ত্র ও তুলা ছিল রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান উপকরণ। তখন ও মুদ্রার প্রচলন হয়নি ।বিনিময় প্রথার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। ক্রিট সুমেরু মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে জলপথ ও স্থলপথ এর ব্যবসা বাণিজ্য চলত। যানবাহন হিসেবে উট, গাধা ,দু চাকা বিশিষ্ট গরু ও ষাঁড়রের গাড়ি ব্যবহার করত। তাদের মধ্যে সমুদ্রযাত্রা প্রচলিত ছিল । লোথাল ছিল বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দর।

indus valley civilization :-ধর্ম-

হরপ্পা সভ্যতায় মন্দিরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ আছে ।কয়েকটি বড় বড় অট্টালিকাকে মন্দির বলে অনেকেই মনে করেছেন। সেগুলি মন্দির না হলেও যেখানে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে পূজার রীতির প্রচলন ছিল না ।সিন্ধু উপত্যকার প্রচুর অর্ধনগ্ন নারী মূর্তি মিলেছে। পণ্ডিতরা এই মূতিগুলিকে বা ভূমাতৃর্কা বলেছেন ।একটি সীলে ,বাঘ, হাতি, গন্ডার,মোষ ও পাঁচটি পোশু দ্বারা পরিবৃও ও এিমুখ বিশিষ্ট ধ্যানমগ্ন একযোগে মূর্তি দেখা যায় ।মূর্তিটির মাথায় দুটি শিং আছে ।অনেকের ধারণা এটি একটি শিবমূর্তি। অধ্যাপক ব্যাসাম এটিকে আদিশিব বলে অভিহিত করেছেন ।শিবের বাহন ষাঁড় কিন্তু এই মূওিতে ষাঁড় নেই। সিন্ধু বাসীদের মধ্যে বৃক্ষ ,আগুন, সাপ ,জল বিভিন্ন জীবজন্তু লিঙ্গ ও যোনী পূজা এবং সম্ভবত সূর্যের উপাসনা ও প্রচলিত ছিল। কয়েকটি সীলে সূর্যের প্রতীক স্বস্তিকা ও চক্রা পাওয়া গেছে। একটি সিলে অর্ধনর ও অর্ধবৃষ মূতিকে একটি বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে দেখা গেছে। এই মূর্তিটি হল সুমেরুর গিলগণেশ নামক বীরের সাহায্যকারী অর্ধনর অর্ধবৃষ আকৃতি বিশিষ্ট ই-অধনি মূর্তির অনুরূপ।সিন্ধু উপত্যকার এইমূওি সুমেরীয় উপত্যকা সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার ঐক্য প্রমাণ করে। এছাড়া এইমূর্তি পৌরাণিক যুগের হিরণ্য কশিপু নিধনকারী নিসিংহ মূর্তি কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে হয় যে, সিন্ধু বাঁশি এই নর ও বৃষমূর্তিকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করত।

indus valley civilization :-সিলমোহর-

সিন্ধু উপত্যকায় পোড়ামাটি ,তামা, ব্রোঞ্জ এ তৈরি নানা শিলমোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। পণ্ডিতদের অনুমান প্রধানত ব্যবসা-বাণিজ্যে জন্যই এইসব সিলমোহর তৈরি হয়েছিল। এইসব সীলমোহরর বিভিন্ন জীবজন্তু ও জলযানের চিত্র অঙ্কিত আছে। এ থেকে মনে হয় যে, এই সব জীবজন্তু ও জলযান গুলি তাদের সুপরিচিত ছিল। আবার কিছু সিলমোহরের চিত্রলিপি উৎকীর্ণ আছে। এগুলি হল সিন্ধু লিপি বা হরপ্পা লিপি। সিন্ধু লিপির পক্ষে চিত্রলিপির স্তর অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি।তবে এ কথা ঠিক যে ,এই লিপি ডানদিক থেকে বাঁদিকে পোরা হত।

indus valley civilization :-শাসন ব্যবস্থা-

সিন্ধু অঞ্চলের কিরূপ শাসন ব্যবস্থা ছিল সে সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। তবে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, সিন্ধু পতাকায় রাজশক্তি না থাকলেও সেখানে একটি কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ছিল। এই শাসকগোষ্ঠীর সহযোগী রূপে একটি উন্নত সামাজিক সংগঠক ছিল। অনেকে মনে করেন যে, হরপ্পা সংস্কৃতির মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য ছিল না। সেখানে ছোট ছোট কুঠুরি জাতীয় ঘরগুলোকে সমাজে দাসশ্রেনীর কথা বলেন।

Leave a Comment

Translate »