অনেকটা জেদ চেপেছিল গত বছর। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিল তাওসিফ। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে গিয়েছিল সুইজারল্যান্ডে। তিন সতীর্থ পদক জিতলেও নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারেনি কোন পদক। মন খারাপ হয়েছিল। যতটা না নিজের জন্য, তার চেয়ে বেশি দেশের জন্য। ফিরে এসে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। বিভিন্ন বইপত্র, পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান, ফিজিক্সের সমস্যা তৈরি করে তার সমাধানও করতে থাকে। ফল মেলে ২০১৭ সালে এসে। ইন্দোনেশিয়ায় এ বছর অনুষ্ঠিত হয় ৪৮তম আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। বাংলাদেশের ছিল এটি ষষ্ঠ অংশগ্রহণ। এ আসরেই তাওসিফ নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি হিসেবে রৌপ্যপদক জয় করে। বিজ্ঞানের প্রতি তার ভালোবাসা শৈশব থেকেই। তার কথায়, 'স্কুল থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি দুর্বল ছিলাম। বিজ্ঞানের উদ্ভাবন এবং সমস্যা নিয়ে ভাবতাম। এ ভাবনা থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি দুর্বলতা।'
পদার্থবিদ্যার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় নাম লেখায় পদার্থবিদ্যা অলিম্পিয়াডে। সাফল্যও আসে। জাতীয় পর্যায়ে এ ক্যাটাগরিতে হয় দ্বিতীয়। পরের বছর জাতীয় পর্যায়ে বি ক্যাটাগরিতে তৃতীয়। পদার্থবিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক আসরে এটি তার প্রথম অর্জন নয়। গত বছর হংকংয়ে অনুষ্ঠিত এশীয় পদার্থবিদ্যা অলিম্পিয়াডেও জিতেছিল প্রেসিডেন্ট স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড।
তবে এর কৃতিত্ব সে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলকেই দেয়। তার কথায়, 'বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম রুপা জয় আমার জন্য গর্বের। বাবা-মা দু'জনেই পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে সাহস জুগিয়েছেন। ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের কোচ ড. আরশাদ মোমেন, সাধারণ সম্পাদক এফ এ জাহাঙ্গীর মাসুদ স্যার, অলিম্পিয়াডের বিগত বছরগুলোতে অংশ নেওয়া ফাহিম তাজওয়ার, অভয় দত্ত, সুপান্থ রক্ষিত, অর্পণ পাল ভাইয়ারাও যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।'
তাওসিফের পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের সদস্য রাজশাহী কলেজের ফাহিম তাজওয়ার স্বচ্ছ, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের নিশাত ফাহমিদা প্রত্যাশা এবং চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র আবরার আল শাদীদ আবির ব্রোঞ্জ এবং অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আজমাইন ইকতেদার অনারেবল ম্যানশন অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম রৌপ্যপদক জয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের কোচ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্তি্বক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আরশাদ মোমেনের ভাষায়, 'আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবস্থা পর্যালোচনা করা হয় কোন দেশ ক'টা অ্যাওয়ার্ড পেল তার ওপর। বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কয়েক বছর ধরে রৌপ্যপদক অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছিল। এ বছর তাওসিফের হাত ধরে বাংলাদেশ প্রথম রৌপ্যপদক পেল।'
এবারের আসরে অংশ নিয়েছিল ৯০ দেশের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, সিরিয়া, আজারবাইজান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর দলের সঙ্গে। তাদের দিয়েছে বাংলাদেশের স্ট্যাম্প। অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে পুতুল ও ভারতীয় দলের কাছ থেকে পেয়েছে ডায়েরি। নতুনদের জন্য তার কথা, 'ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে ভালো করতে চাইলে নতুনদের একেবারে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি থেকেই শুরু করতে হবে।' একাডেমিক পড়াশোনায়ও ভালো তাওসিফ আহসান। উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে গত বছর সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়ে এসএসসি পাস করে। এখন পড়ছে নটর ডেম কলেজে। আগামী বছর আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে স্বর্ণপদক জয়ের স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি সে ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞানী হতে চায়।

মন্তব্য করুন